সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। ওই ঘটনার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের হওয়া ১৫৯ মামলার মধ্যে এই ১৫ বছরে একটি মামলাও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। এ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে ৯৬ মামলার রায় হলেও ৪৭টি মামলা এখনো সেখানেই। বারবার সমন দিয়েও সাক্ষী হাজির করতে না পাড়া, মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা আরও সুরক্ষিত করতে হলে চাঞ্চল্যকর এসব মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আর কেউ এমন অপরাধে জড়াতে সাহস পাবে না।
ঘটনার দিন দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) বেলা ১১টার দিকে একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের ৪৫০টি স্থানে চালানো সেই হামলায় পাঁচ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলায় দুজন নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। হামলা চালানো হয় সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব, সরকারি ও আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিরিজ বোমা হামলার এই ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬৩ জেলায় ১৬২টি মামলা হয়। তিনটি খারিজ হওয়ায় অবশিষ্ট থাকে ১৫৯টি মামলা। এর মধ্যে ১৪৩টি মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে ১ হাজার ১২১ জনকে। এদের মধ্যে ৯৮৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি ১৬টি মামলা পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার পর বিভিন্ন আদালত থেকে খারিজ হয়ে যায়। পুলিশ সূত্র জানায়, চার্জশিট দেওয়া ১৪৩ মামলার মধ্যে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৯৬টি মামলায় নিম্ন আদালতে রায় হয়েছে। আর ৪৭টি মামলা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পুলিশ সূত্র আরও জানায়, অনেক মামলায় সাক্ষীদের না পাওয়ার কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরিবর্তন হয়েছে। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর নেই। এখন যে কোনো অপরাধেরই বিচার হয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টে সারা দেশে যে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল, ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচার চলমান। করোনার কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও, বিচারিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে দ্রুতই এসব মামলার বিচার শেষ হবে বলেও আশা করছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা জঙ্গিদের মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শুনানি করার চেষ্টা করি। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু মামলা হাই কোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুতই নিষ্পত্তি হবে। এখন পর্যন্ত সিরিজ বোমা হামলার কোনো মামলা আপিল বিভাগ পর্যন্ত চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো মামলা আপিল বিভাগ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ ৯৬১ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে : জানতে চাইলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের মানুষ একটা ভীতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।
দেশে ঠিক কী হতে যাচ্ছে কেউ বুঝে উঠতে পারছিল না। এরপর জঙ্গিরা দেশে আরও বেশ কিছু অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তবে বর্তমান সরকার জঙ্গিদের কঠোরভাবে দমনে কাজ করছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য সিরিজ বোমা হামলার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে আসামিদের, যাতে অন্যকেউ এমন জঘন্য কাজে জড়িয়ে পড়তে সাহস না পায়। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন