দেশে বাড়ছে অপ্রদর্শিত অর্থ। বাড়ছে পাচার। অর্থের অভাবও বাড়ছে। অথচ মহামারী করোনাভাইরাসের মহাবিপর্যয়ে দুই কোটি ৪০ লাখ ‘নব-দরিদ্র’ গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের হাতে কাজ ও মুখে ভাতের নিশ্চয়তা নেই। লকডাউনে গৃহবন্দী ও ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা স্থবিরতায় অশনি সংকেত দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, অর্থনীতির চরম ক্রান্তিকালে অপ্রদর্শিত অর্থের শর্তহীন বিনিয়োগ অপরিহার্য। আবাসন খাতসহ অন্যান্য শিল্প, কল-কারখানা স্থাপনে অপ্রদর্শিত অর্থের অবাধ বিনিয়োগ নিশ্চিত হলে বাড়বে কর্মসংস্থান। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়লে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। ত্রাণের বদলে কাজ করেই বাঁচবে মানুষ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন-বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের এমন সুযোগ বহুবার দিয়েছে। সরকারের উচিত হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং শূন্য করহারে খাতওয়ারি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া। আবাসন খাত ও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে শর্তহীন ও ভয়মুক্ত পরিবেশে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ হলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। এই সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক বা অন্য কোনো আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার প্রশ্নের সুযোগ রাখা যাবে না বলেও মত দেন রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক লিমিটেডের এই চেয়ারম্যান।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের মতে-করোনাকালের চরম অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আবাসনে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ হলে দেশের অর্থনীতি বাঁচবে। এক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত জমি ও ফ্ল্যাট প্রকল্পে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। ফলে আবাসন খাতে গতিশীলতা আসবে। এর সঙ্গে জড়িত ২১১টি ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প ও ৪৫৮ পণ্যভিত্তিক উপ-খাত ঘুরে দাঁড়াবে। বাড়বে কর্মসংস্থান, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে সরকার। এতে চলমান সংকট কাটাতে টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হবে না। মুদ্রাস্ফীতি ও হতদরিদ্র বাড়বে না। এই লক্ষ্যে কমপক্ষে আগামী দুই অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে ছয় মাস অন্তর এই সুবিধার পর্যালোচনা করতে হবে। এর ফলে সরাসরি জনগণকে টাকা না দিয়ে বেসরকারি খাতে প্রণোদনার মাধ্যমে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অপ্রদর্শিত আয়ে সুযোগ দরকার। এটা দূর দিনে কাজে লাগবে। এক্ষেত্রে অন্যকোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে। সরকারও রাজস্ব পাবে। প্রয়োজন হবে না টাকা ছাপানোর। মুদ্রাস্ফীতি ও হতদরিদ্র বাড়বে না। আবার সংকটে ত্রাণ নয়, মানুষকে কাজ দিয়ে বাঁচানো যাবে। বিনিয়োগ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অন্তত দুই বাজেটে বেসরকারি খাতের জন্য এই সুবিধা সরকার দিতেই পারে। এই সুযোগ দিয়ে প্রয়োজনে ছয় মাস অন্তর পর্যালোচনাও করা যাবে।
আবাসনশিল্প উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একাধিক বার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হলেও প্রত্যাশিত সুফল মিলছে না। কারণ একটি বিশেষ সংস্থার প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। এতে ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তবে এক-এগারো সরকারের আমলে বিনা প্রশ্নে সুযোগ দেওয়ায় আবাসন খাতে প্রচুর বিনিয়োগ এসেছিল। এ ব্যাপারে কিছু লোক দ্বিমত পোষণ করে নৈতিকতার কথা বলেন। কিন্তু করোনার কারণে অর্থনীতি চরম হুমকিতে পড়েছে। এখন নৈতিকতার চেয়ে মানুষের বেঁচে থাকা বেশি জরুরি। এই ভগ্ন অর্থনীতি দাঁড় করাতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকারকে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এমন নীতি নিতে হবে যেন প্রচুর বিনিয়োগ হয়। ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র পথ হবে বেশি বেশি বিনিয়োগ। সরকার, বেসরকারি খাত ও ব্যাংক মিলে এই বিনিয়োগ করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আবশ্যকতার নিরিখেই নৈতিকভাবে এসব অপ্রদর্শিত আয় করের আওতায় আনা জরুরি। কেন তা আনা যায়নি বা যাচ্ছে না, বাধা পদ্ধতির, না প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির, এর একটা সংস্কার অনিবার্য হয়ে উঠেছে করোনাকালের এই বাজেটে। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় দুর্যোগে আপাতত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকল্পে এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেই অনেক সময় লাগবে। রাজস্ব আয়ও কমবে। সরকারকে খরচ মেটানোর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হবে, তার বড় উৎস হতে পারে অপ্রদর্শিত আয়। এই অর্থ বিনা প্রশ্নে এখন অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এখন নীতি-নৈতিকতা নিয়ে ভাবার সময় নেই। এ টাকা বিনিয়োগে আনতে অর্থের উৎস নিয়ে দুদক বা অন্য সংস্থা প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
হিসাববিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি কামরুল আবেদীন মনে করেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ আয়ের উৎস হিসাবে বিবেচনা করে তা আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
এদিকে আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সামনে রেখে মহামারী করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সংগঠনটি কভিড-১৯ এর সংক্রমণ ও দুই মাসের বেশি সময় লকডাউনে গৃহবন্দী ও ব্যবসা-বাণিজ্য-কল-কারখানায় স্থবিরতার কারণে যেসব ক্ষয়-ক্ষতি-বিপর্যয় ঘটেছে তা এবং মোকাবিলার পথও দেখিয়েছে। অর্থনীতি সমিতির মূল্যায়নে বলা হয়, কভিড-১৯ মহামারীর মহাবিপর্যয় শ্রেণিকাঠামোকে পাল্টে দিয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ৬৬ দিনে বিশাল এক “নব-দরিদ্র” গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে। লকডাউনের আগে দরিদ্র মানুষের মোট সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ যা লকডাউনের মাত্র ৬৬ দিনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৫ কোটি ৮০ লাখ। ব্যাপক সংখ্যক মানুষ খুবই দ্রুত সময়ে, মাত্র ৬৬ দিনের মধ্যে (২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে ২০২০) শ্রেণি মই-এর তলার দিকে নামতে বাধ্য হয়েছেন-হচ্ছেন। এ এক অশনি সংকেত-প্রচ- ঝড়ের পূর্বাভাস মাত্র।
এমন প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি সমিতি করোনাকালের বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে নতুন ২১টি উৎস দেখিয়েছে, তার মধ্যেও আছে- অর্থপাচার রোধ থেকে আয় এবং অপ্রদর্শিত আয় থেকে কর আদায়। দেশে পুঞ্জীভূত অপ্রদর্শিত টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে- মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৪২ থেকে ৮০ শতাংশ। বিষয়টি বাস্তব সত্য। এই অর্থ উদ্ধার প্রয়োজন। অপ্রদর্শিত অর্থ সংশ্লিষ্ট “সিজর ইফেক্ট” কীভাবে সমাধান করা যায়, বিষয়টি বাজেটে উল্লেখ করা জরুরি। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ উদ্ধারের প্রস্তাব করেছে অর্থনীতিবিদদের এই সংগঠন। পাশাপাশি বাজেটে মানি চেঞ্জার কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমের ওপর নজরদারি জোরদার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থনীতি সমিতি অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার প্রসঙ্গে বলেছে, প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থপাচার হচ্ছে। অর্থপাচার রোধ থেকে আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হোক। এর সঙ্গে মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে চলমান সরকারি উদ্যোগ অব্যাহত রাখা উচিত। মাদক চোরাচালানের সঙ্গে অপ্রদর্শিত অর্থ ও অর্থপাচার উভয়ই সম্পর্কিত। একইভাবে জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড অর্থায়নের সঙ্গেও অপ্রদর্শিত অর্থ ও অর্থপাচার উভয়ই সম্পৃক্ত।
তথ্যমতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাজেটের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা দেয়। তখন এক হাজার ৯২৩ জন এই সুযোগ নিয়ে ৯২২ কোটি ৯৮ লাখ ৮ হাজার ৯৭২ টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে যুক্ত করেছিলেন। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে জমি-ফ্ল্যাট ও শিল্প খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে একটি সংস্থার প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা এক্ষেত্রে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে ২০১৭ সালের ৮ জুন জাতীয় সংসদকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন- ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত (২০১৭) দেশে ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হওয়ায় সরকার রাজস্ব পেয়েছে এক হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দুই বছরে ঘোষিত এই অর্থের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৯১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আমলে ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ১ হাজার ১০৫ কোটি ১ লাখ টাকা এবং ২০১৩ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৮৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
সংসদে আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বাধীনতার পর অপ্রদর্শিত অর্থ ঘোষণার বছরওয়ারি হিসাব দিয়েছেন। যেমন- ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা হয়, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত সাদা হয় ৫০ কোটি ৭৬ লাখ, ১৯৮১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ, ১৯৯৭ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। তবে মুহিত মোট পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা বললেও বছরওয়ারি অঙ্কগুলো যোগ করলে আরও এক হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ ১৪ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা দাঁড়ায়।
জানা গেছে- স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারগুলো ১৬ বার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। বলা যায়, প্রায় সব সরকারের আমলেই অপ্রদর্শিত বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি টাকা ঘোষণা হয়েছে বিগত ২০০৭ ও ২০০৮ সালের এক-এগারোর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিলেন। তখন ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করা হয়, যা এই পর্যন্ত যত টাকা বৈধ হয়েছে, এর অর্ধেকের বেশি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করা-সংক্রান্ত আয়কর অধ্যাদেশের সব কটি ধারা (১৯বি, ১৯ বিবি, ১৯ বিবিবি) বিলুপ্ত করে দিয়েছিল। বর্তমান সরকার আবার গাড়ি ছাড়া বাকি সবগুলো সুযোগ নতুন করে দিয়েছে।
দেশে সামরিক আইনের আওতায় এই সুযোগ প্রথম দেওয়া হয় ১৯৭৫ সালে। এরপর ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেন। ১৯৮১-৮২ অর্থবছরের বাজেটে আবারও একই সুযোগ দেওয়া হলেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
জেনারেল এরশাদও ১৯৮২ সালের সামরিক আইন অনুযায়ী, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেন। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরের বাজেটে আবার ২০ শতাংশ আয়কর দিয়ে ওই অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছর, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে একই সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ প্রায় প্রতিটি বাজেটেই বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে এবং মূলধারার অর্থনীতি শক্তিশালী করতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়। এমনকি ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়েছিল, কেউ নতুন শিল্পে বিনিয়োগ করলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। আর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর দিলে কর অবকাশ সুবিধাও দেওয়া হবে। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের বাজেটে গাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনলে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০০০-০১ সালের বাজেটে ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। তাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়। ২০০১ সালে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের ধারবাহিকতায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বলেছিলেন, অর্থনীতিতে বিপুল অঙ্কের কর অনারোপিত আয় রয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিকবার কর অনারোপিত আয় ঘোষণার বেলায় যে আংশিক কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল, তাতে বিনিয়োগের কোনো দিক-নির্দেশনা না থাকায় এতে কাক্সিক্ষত সাড়া পাওয়া যায়নি। এই অর্থমন্ত্রীর সময়ে দেশে অপ্রদর্শিত ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ঘোষণা আসে। তিনি শর্তহীনভাবে বিভিন্ন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেন। এজন্য কোনো করও নির্ধারণ করা হয়নি। ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০০৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রায় এক হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত অর্থের ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ নিয়েছিলেন এক হাজার ৭৭ জন। আর ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বাজেটে এ ধরনের অর্থে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করায়, তখন বিনিয়োগের সুযোগ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ২৫২ জন। এতে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ হয় চার হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন