ভারতে গজালডোবার তিস্তা বাঁধের সব গেট খুলে দেওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে এ মাসে এবারও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্যা নিয়ন্ত্রণ পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছিল। এ পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েকদিনে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিমিটার। পানি বৃদ্ধির ফলে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা কালীগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে আতঙ্কে রয়েছে তিস্তার দুই পাড়ের ১০ লাখ মানুষ। জানা গেছে, গত দুই বছরে বন্যার সময় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কয়েকটি স্থান, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাট সদর, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ওইসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে সে সময়। বাঁধ ভেঙে দুই পাড়ে পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রমের মানুষ গত বছর চরম দুর্ভোগে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প তৈরি করে ঢাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠায়। কিন্তু অনেক স্থানে বাঁধ এবং নদীর পাড় এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এবার বন্যা হলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের আবদুল মজিদ, কাউনিয়ার আফজাল হোসেন, হারাগাছের রমজান আলীসহ বেশ কজন জানান, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো মেরামত করা হযনি। ফলে বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করে অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের অনেক স্থান সংস্কার করা হয়েছে। আশা করি এবারের বন্যায় তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের এ ধারা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) সামছুজ্জোহা জানান, ভারতের গজালডোবায় তিস্তার ব্যারাজের সব গেট খুলে দেওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেচ ক্যানেলের গেট বন্ধ করে ব্যারাজের ৪৪টি গেটই খুলে রাখা হয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
আতঙ্কে তিস্তাপাড়ের ১০ লাখ মানুষ
আপনার মতামত লিখুন :