অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার চান সিমেন্ট শিল্পের মালিকরা। তাদের সংগঠন বিসিএমএ বলেছে, সিমেন্ট খাতকে অনীহার দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। অগ্রিম আয়কর অসমন্বয়যোগ্য হওয়ার কারণে কারখানাগুলো পুঁজির সংকটে পড়ছে। এখন শেয়ারহোল্ডারদের কী জবাব দেবে তারা? প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা সিমেন্ট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। গতকাল অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিসিএমএ সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির। এতে সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহও বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরে বিসিএমএ সভাপতি আলমগীর কবির বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের প্রায় প্রতিটি ব্যবসায় স্থবিরতা চলছে। নির্মাণকাজ নেই। চাহিদা না থাকায় সিমেন্ট কারখানাগুলো সক্ষমতার ৩০-৪০ শতাংশের বেশি চালাতে পারছে না। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ঠিকই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অন্যান্য নিয়মিত খরচও রয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির জন্য যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তা উদ্যোক্তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর দিতে হলে তা অন্যায্য হবে। অগ্রিম আয়করের বিষয়ে বিসিএমএ বলছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সিমেন্ট খাতে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়। এটি অসমন্বয়যোগ্য চূড়ান্ত দায়। এর মানে, কোনো কোম্পানি লাভ বা লোকসান যা-ই করুক না কেন, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতেই হবে। পরে উদ্যোক্তারা সরকারি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দেনদরবার করলে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তবে অগ্রিম আয়কর অসমন্বয়যোগ্য হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর পুঁজি থেকে এটি চলে যাচ্ছে।
অগ্রিম আয়করের পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বা টনপ্রতি ৩০০ টাকা নির্ধারণের দাবি করেছে বিসিএমএ। সংগঠনটি বলছে, দেশের সিমেন্ট খাতের প্রয়োজনীয় শতভাগ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। এর পরও যে পরিমাণ আমদানি শুল্ক আরোপ করা আছে, তা অযৌক্তিক। সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিঙ্কার আমদানিতে শুল্ক টনপ্রতি ৫০০ টাকা আরোপ করা আছে। প্রতি টন ক্লিঙ্কার বর্তমানে ৪২ ডলারে আমদানি হচ্ছে। সেই হিসাবে আমদানি শুল্ক দাঁড়ায় ১৪ শতাংশ। দেশের অন্য কোনো শিল্পে এই পরিমাণ আমদানি শুল্ক আরোপ করা নেই। এটি বড়জোর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি করেছিল বিসিএমএ। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বর্তমানে সচল সিমেন্ট কারখানার সংখ্যা ৩৫টি। বার্ষিক সিমেন্টের চাহিদা সাড়ে ৩ কোটি টন হলেও কারখানাগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮ কোটি টন। আগামী তিন বছরের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা আরও ১ কোটি ১০ লাখ টন বৃদ্ধি পাবে। খাতটিতে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। সিমেন্ট খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে বিসিএমএ সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, করোনার কারণে সিমেন্ট খাতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত কারখানাগুলোর ৯০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ ছিল। বর্তমানে ৬০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ। মূলত বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণই উৎপাদন হচ্ছে। কারণ দুই-তিন দিনে যে সিমেন্ট উৎপাদিত হয়, এর বেশি মজুদ রাখার সক্ষমতা নেই। বিসিএমএ সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে সিমেন্ট কারখানাগুলোতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উৎপাদন নেই। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারেন। আমাদের দাবি অযৌক্তিক প্রমাণিত হলে এখান থেকে সরে আসব।’সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন