- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি ধন্যবাদ প্রস্তাবের খসড়া: সৈয়দ বোরহান কবীর

করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনবদ্য, অভূতপূর্ব এবং অসাধারণ কাজ করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে একশ্রেণির মানুষ অনাকাক্সিক্ষতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করছে। যারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করছেন তারা অবিবেচক এবং অর্বাচীন। যারা এই সমালোচনা করছেন তারা ষড়যন্ত্রকারীও বটে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি এবং ইমেজ নষ্টের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মহানুভব, উদার। এ কারণে তারা সমালোচকদের পিটিয়ে পাছার চামড়া লাল করে দেননি। তা ছাড়া এত বড় এবং মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এসব সমালোচনা গায়ে মাখতে নেই। এ বোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেবদূত-সম কর্মকর্তাদের না থাকার কোনো কারণ নেই। আর এসব সমালোচনায় কিইবা যায় আসে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তারা তাদের কাজের স্বীকৃতি ঠিকই পাচ্ছেন।

করোনার আগেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পুরস্কৃত হয়েছেন। তার মতো দক্ষ, করিৎকর্মা মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এজন্য তাকে আগেই দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যিস, আগেভাগেই তার সঙ্গে চুক্তিটা হয়েছিল। না হলে এই করোনাকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঠিকই তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যেত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ নিয়ে ঝগড়াও ছিল অবধারিত। কারণ, একের পর এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করে ট্রাম্প এরকম একজনকে খুঁজছিলেন। যিনি কাজ করবেন না, শুধু আশ্বাস দেবেন। স্বপ্ন দেখাবেন। মানুষজন এসব আশ্বাস শুনে বুঁদ হয়ে থাকবে। যেভাবে আফিমে বুঁদ হয়ে থাকে। সরকারের বিচক্ষণতা এবং দূরদৃষ্টির প্রশংসা না করে উপায় নেই। প্রায় দেড় বছর আগে সরকার বুঝেছিল যে, বাংলাদেশে করোনা নামে এক ভাইরাস আসবে। আর এটা মোকাবিলার জন্য এ মহাপরিচালকের বিকল্প নেই। এজন্য তাকে আগে থেকেই চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে রেখেছিল। অথচ বেয়াদব কিছু সমালোচক না বুঝেই বলে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাকি প্রস্তুতি ছিল না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো দেড় বছর ধরেই করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধির সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সামাজিক দূরত্ব। কী অসাধারণ দেখুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আগে থেকেই এ চর্চা করতেন। মহাপরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর সামাজিক দূরত্ব মেনে তিনি দেশের কোনো জেলা, উপজেলা হাসপাতাল পরিদর্শনে যাননি। কমিউনিটি ক্লিনিক তো নয়ই। এজন্য তাকে পুরস্কৃত করা উচিত। অথচ কিনা তার সমালোচনা করা হয় যে মহাপরিচালক মাঠের খবর জানেন না। কী অর্বাচীন আমরা। মহাপরিচালক হলেই হাসপাতাল, হাসপাতাল ঘুরে বেড়াতে হবে-এটা কী ধরনের কথা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের স্বাধীনতা পদক দেওয়া উচিত। কারণ তিনি মানুষের স্বাধীন চলাচলে বিশ্বাসী। ইতালি থেকে যখন প্রবাসী বাঙালিরা এলো, তখন তাদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে কোয়ারেন্টাইন করা হলো। ইতালিফেরতরা বিদ্রোহ করে বসল। এ সময় স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে আশকোনা হজ ক্যাম্পে ছুটে গেলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। বললেন ‘আমি তোমাদের মুক্ত করতে এসেছি।’ খাঁচা থেকে পাখি যেভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়, সেভাবে তিনি করোনামিশ্রিত ইতালিফেরতদের উন্মুক্ত করে দিলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেশিন, যন্ত্রপাতি থেকে আসবাবপত্র কেনাকাটা নিয়ে খামোখা সমালোচনা হয়।
বাংলাদেশে তো কাকের চেয়েও বেশি সমালোচক। কোন দেশের মেশিন, আন্তর্জাতিক বাজারে কত দাম। এসব তথ্য খুঁজে বের করে কিছু সাংবাদিক অযথা হৈচৈ করে। এজন্য মহাপরিচালক কেনাকাটার নতুন ‘পণ্য’ চালু করলেন। সফটওয়্যার কেন, যত খুশি। সফটওয়ারের মূল্য সাংবাদিকরা যাচাই করবে কীভাবে? তা ছাড়া ওপেন সোর্স থেকে সফটওয়্যার নিয়ে একটা দাম বসিয়ে দিলেই হলো। শেষ পর্যন্ত টাকা তো আসবে ঘরে। মেশিন কিনে হাত নষ্টের দরকার কী? এ আবিষ্কার কি ব্যতিক্রমী নয়?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক করোনা মোকাবিলার ‘নিয়ন্ত্রণ থিওরি’র প্রবর্তক। প্রথম থেকেই তিনি সীমিত পরীক্ষা, সীমিত রোগী, সীমিত মৃত্যুর তত্ত্বে চলছিলেন। শুধু রোগতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রকে নিয়ে দিনে ১০০ পরীক্ষার কৌশল যদি এখনো বহাল থাকত, তাহলে কি বাংলাদেশে এত করোনা রোগী হতো? কিছু বাচাল গবেষকদের চাপে পরীক্ষা বাড়িয়েই তো এ সর্বনাশ ডেকে আনা হলো। মহাপরিচালকের কথা শুনলে দেশে এ পরিস্থিতি হতো না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, করোনা সংকটে কৃচ্ছ্রতা সাধন প্রকল্পও চালু করেছেন। এ প্রকল্পের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা উচিত। তা না করে তার সমালোচনা করা হচ্ছে। টেন্ডার ডাকতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়, খরচ। টেন্ডার কমিটির মিটিং করতে হয়, সেখানেও খরচ। এসব খরচ বাঁচিয়ে তিনি এক ব্যক্তিকে ডেকে সব কাজ দিয়ে দিচ্ছেন। কী অসাধারণ ফর্মুলা। অথচ এখানেও দুর্নীতি খোঁজা হয়। কি অদ্ভুত।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না করছেন। খামোখা এত কষ্ট করে বিদেশ থেকে এম-৯৫ মাস্ক কেন আনতে হবে? কেন আমরা স্বাধীন দেশে এ মাস্ক বানাতে পারব না। গাজীপুর থেকে মাস্ক বানিয়ে তিনি কি অনন্য দেশপ্রেমের পরিচয় দিলেন। অথচ দেশপ্রেম বিবর্জিত কিছু চিকিৎসক এ নিয়ে খামোখা শোরগোল করল। মাস্ক তো মাস্কই, দেশে তৈরি হলে সমস্যা কি? গাজীপুরে বানানো মাস্কের যারা সমালোচনা করে, তাদের দেশপ্রেম নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে।

এরকম অনেক কীর্তি গড়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। তিনি এখন সারা বিশ্বের রোল মডেল। কভিড পরীক্ষায় তিনি গোল্ডেন প্লাস পেয়েছেন। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বে সর্বকালের সেরা মহাপরিচালকদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিবও অত্যন্ত সফল। আমজনতা তাকে নিয়ে যতই সমালোচনা করুক না কেন, সরকার বাহাদুর ঠিকই বুঝেছেন তিনি কি অমূল্য রতন। এজন্য নগদ নগদ তিনি পুরস্কারও পেয়েছেন। সচিব থেকে তিনি সিনিয়র সচিব হয়েছেন। ভালো কাজের জন্যই তো এই স্বীকৃতি। সচিবদের বড় কাজ কী? চোখ-কান বন্ধ রেখে কোনো কাজ না করা। মন্ত্রী আছে, অতিরিক্ত সচিব আছে, যুগ্মসচিব আছে, চাকর-বাকর পিয়ন, দারোয়ান, চাপরাশি আছে। তাহলে সচিবকে কেন এত কাজ করতে হবে? সচিব হলো মূর্তির মতো। কাচেঘেরা মূর্তি যাকে দেখে মানুষ পুলকিত হবে, শিহরিত হবে, ভয় পাবে। তেমনি সচিব হলেন তিনি। শুধু দেখতেন। কিছু বলতেন না, কিছু করতেন না। সচিবরা হলেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি কোনো দলের নন। সরকার পরিচালনাতেও দরকার সবার অংশগ্রহণ। বিদায়ী সচিব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জামায়াত-বিএনপি সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে, তিনি বিভাজন এবং বিভক্তির বিষবাষ্প উপড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। ছাত্রদলের নেতাকে কভিড প্রকল্পের দায়িত্ব দিয়ে দেখিয়েছিলেন, তিনি কত নিরপেক্ষ।

একই কাজ বহু লোককে দিয়ে জগাখিচুড়ি তৈরি করা হয়। এর ঘোর বিরোধী ছিলেন সাবেক সচিব। এজন্য একজনকেই চার চারটি দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কাজ করলে দুর্নীতি হবেই। একটি কাজে বেশি লোক জড়ালে দুর্নীতির খবর ফাঁস হয়ে যায়। আজকাল তো সাংবাদিকদের কোনো কাজ নেই। দুর্নীতির একটা কাগজ পেলেই হলো। বড় বড় হেডলাইন করে বসে। সাবেক সচিব, লেখাপড়া জানা, জ্ঞানী। তিনি আবিষ্কার করলেন, অনেকে বসে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই সব খবর বেরিয়ে যায়। এজন্য, তিনি নতুন ফর্মুলা আবিষ্কার করলেন। বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প, এডিবির প্রকল্প সব একজনকে দিলেন। দুর্নীতি প্রকাশ না হলেই তো হলো।

সচিবের এ নীরব কর্মহীন কর্মবিপ্লবের কারণে তাকে এখন পরিকল্পনা কমিশনে নেওয়া হয়েছে। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদাররা কেন দুর্নীতির সুফল ভোগ করবে? কেন শুধু মিঠু আর আবদুর রাজ্জাকরা বিত্তশালী হবে? অন্যান্য সেক্টরে যারা ঠিকাদার তারা কি মানুষ নয়? তা ছাড়া তাদের জন্য তো সরকার কোন প্রণোদনা ঘোষণা করেনি। তারা তো রাস্তায় গিয়ে ভিক্ষা করতে পারবে না। তারা কীভাবে ৫০০ টাকার পর্দা আশি হাজার টাকায় বিক্রি করবে। তারা কীভাবে এক কোটি টাকার মেশিন ৫০ কোটি টাকায় বিক্রি করবে? এ বিষয়ে জ্ঞান ও শিক্ষা দিতে পরিকল্পনা কমিশনে নিয়ে আসা হয়েছে স্বাস্থ্য সচিবকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা তিনি ছড়িয়ে দেবেন সব মন্ত্রণালয়ে। সব ঠিকাদার হাসবে। তারা ধনী হয়ে উঠবেন। ফলে অর্জিত অর্থের একটা অংশ তারা সরকারি কর্মকর্তাদের দেবেন। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা করে প্রণোদনার দরকার হবে না। আর এ নিয়ে দুর্নীতির মামলা হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ শতকরা ১০ ভাগ দিলেই কালো টাকা সার্ফএক্সেলে ধোয়া হয়ে যাবে। দুর্নীতি দমন কমিশন কারও টিকিটিই ধরতে পারবে না। এর ফলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ অতিক্রম করবে আশা করা যায়। সরকার যে এরকম ‘গবেষক’ সচিবকে আবিষ্কার করে পদোন্নতি দিয়েছে এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।

আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পাওয়া মন্ত্রী। শুধু বাংলাদেশের সেরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী তিনি নন, বিশ্বে তিনি এখন রোল মডেল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যে বিশ্বকে তাক লাগাবেন, এটা বোঝা গিয়েছিল আগেই। যখন তিনি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তখনই। ক্ষমতার মসনদের লড়াইয়ে আমরা সম্মুখ সমরের যুদ্ধের কথা জানি। আমরা প্রাসাদ ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনি পড়ি ইতিহাসের পাতায় পাতায়। কিন্তু ‘কান ভারী’ করা তত্ত্ব কোথাও পাই না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ‘কান ভারী’ তত্ত্বের প্রবর্তক। কান ভারী করেই তিনি পূর্ণমন্ত্রীর সিংহাসন দখল করেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্লু ব্লাড, নীলরক্ত। উত্তরাধিকারী সূত্রে তিনি রাজনীতিবিদ এবং মন্ত্রী। কোন দল ক্ষমতায় থাকল না থাকল তাতে কুচ পরোয়া নেই। ক্ষমতায় থাকতে গেলে ‘নীলরক্ত’ লাগবে। তাই স্বৈরাচারের পদলেহীর পুত্র এখন মুজিবসৈনিক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অত্যন্ত দক্ষ। তিনি জানেন, এরপর তার পুত্র মন্ত্রী হবে। যে দল ক্ষমতায় থাকুক না কেন। এজন্য এখন থেকে তাকে প্রস্তুত করছেন। মন্ত্রিত্ব তো আসলে একটা ব্যবসা। যারা বলে এটা জনগণের সেবা করা, মানবকল্যাণ-তারা তো মহা আহাম্মক। মন্ত্রিত্বে অর্থের গতিপ্রবাহ বুঝতে হয়। এজন্য মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটা, টেন্ডার সব সামলানোর দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন পুত্রের হাতে। এতে দুরকম লাভ। প্রথমত, ছেলে প্রস্তুত হচ্ছে। আগামীতে মন্ত্রী হলে তার বুঝতে সময় লাগবে না। রাজনীতিবিদ মন্ত্রীদের মতো কর্মীদের কথা চিন্তা করে আসল কাজে বিলম্ব হবে না। দ্বিতীয়ত, মন্ত্রীরও কাজ একটু কমল। শ্রম বিভাজন। এখন বয়স হয়েছে, এত ফাইল দেখা এত ফোন আবার দেবতার অর্ঘে পুজো দেওয়ার কৌশল রপ্ত করা-এক হাতে এত সব সামাল দেওয়াটা কঠিন বৈকি। এখন তো লক্ষ্মী ছেলেটা বাপের কষ্ট বোঝে। বাপের সাহায্যে ঠিকাদারদের সঙ্গে মিটিং, টাকা-পয়সার হিসাব-নিকাশ, কে কোন কাজ পাবে এসব দেখভাল করে। মন্ত্রীরা যদি এখনই তাদের সন্তানদের তৈরি করতে না পারেন তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে? ডেল্টা প্ল্যান কীভাবে বাস্তবায়িত হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসাধারণ ভবিষ্যৎদ্রষ্টাও বটে। তিনি শুরু থেকেই বলছিলেন, করোনায় বাংলাদেশ ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। জ্ঞানী, প-িতদের অনেক কথার তাৎপর্য আমাদের মতো মূর্খ সাধারণ মানুষরা বোঝে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ অমর বাণীর গূঢ় রহস্যও আমরা বুঝতে পারিনি। দেখুন, সব তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শুধু পেছনে। উন্নত দেশের তালিকা করলে বাংলাদেশ তলানির দিকে থাকে। দূষণমুক্ত দেশের তালিকাতে বাংলাদেশের অবস্থান শেষদিকে। নিরাপদ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম খুঁজতে চোখে, ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যায়। সেখানে করোনায় চীনকে টপকে দিয়ে কীভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, ভাবা যায়! বাংলাদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের কাতারে। এ অভূতপূর্ব সাফল্যকে যারা খাটো করে দেখে তারা আসলে ষড়যন্ত্রকারী।

যেকোনো বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে হয় সামনে থেকে। লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট। কাউকে কোনো কিছু উপদেশ দেওয়ার আগে তার চর্চা নিজেকে আগে করতে হয়। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ ক্ষেত্রেও একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। করোনা মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং ঘরে থাকার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি মানছি তা? মানছি না। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানছেন। তিনি কোনো সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল সরেজমিনে পরীক্ষা করতে যাননি। কভিড হাসপাতালের চিকিৎসকও স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে যাননি। সামাজিক দূরত্ব বলে কথা। এমনকি টেলিফোনেও তিনি যেন দূরলোকের বাসিন্দা। তিনি যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকার রোল মডেল। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তো সুস্থ থাকতেই হবে।

আরেকটি ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করতেই হয়। তিনি হাসপাতাল প্রস্তুত করেছেন, চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী নেই। কি সুন্দর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। না বুঝেই এটার সমালোচনা করছে কেউ কেউ। হাসপাতাল প্রস্তুত আছে। আপনি করোনায় আক্রান্ত হলেন। আপনি অযথা এখানে সেখানে, এই হাসপাতাল-সেই হাসপাতালে ছোটাছুটি করবেন কেন? আপনি বিছানা-বালিশ-কম্বল, ঘটি বাটি নিয়ে সোজা এরকম একটি সেন্টারে চলে যান। বেড আছে শুয়ে পড়–ন। ব্যস। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ অসাধারণ উদ্যোগ কেউ বুঝল না।

করোনাকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনবদ্য আরেক আবিষ্কার হলো পিপিপি (পিপিই নয়)। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা না বুঝেই পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিই) জন্য চেঁচামেচি করতে লাগল। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন পিপিপি। বেকুব মানুষজন না বুঝেই রং তামাশা করল। আসলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পিপিপি ফর্র্মুলা জাতির সামনে উপস্থাপন করলেন। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ তত্ত্ব আসলে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এক ঐতিহাসিক তত্ত্ব। আপনি অসুস্থ। ঠিক আছে বাজারে গিয়ে একটি পিপিই কিনুন। চিকিৎসককে পাঠিয়ে দিন। তারপর চিকিৎসকের কাছে দেখা করতে যান। হলো তো পার্টনারশিপ। দেশের নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব আছে না। সব কিছু শুধু সরকার আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করবে? আর আপনি দাঁত কেলিয়ে বলবেন-ব্যর্থ। এটা তো হয় না।

তাই, কভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে নজিরবিহীন সফলতা দেখিয়েছে, এটা সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়। এ সাফল্য বাংলাদেশকে নিশ্চয়ই এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর করোনায় যারা মারা গেছে তাদের মৃত্যু তো কপালের লিখন। কপালে যদি করোনায় মৃত্যু থাকে সে কি শরবত খেয়ে মারা যাবে? আর যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা কিন্তু খুব দুষ্ট। কেন আপনারা অযথা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেছেন। আপনার দুষ্টমীর শাস্তি তো আপনাকেই পেতেই হবে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন