- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

সেপ্টেম্বরের পর ঘুরে দাঁড়াবে ব্যাংক খাত

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ বলেছেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। সরকারের ঘোষিত সব প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন করতে ব্যাংকাররা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এই সংকট মুহূর্তে শিল্প খাতের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের পুরো অর্থনীতি চাপে আছে। যার প্রভাব ব্যাংক খাতের ওপর পড়েছে। তবে আমরা যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি সরকারের প্রণোদনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতি পুরো সচল হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এমডি ছালাম আজাদ একজন দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে ঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছেন তিনি। সংকটের মধ্যেও জনতা ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে তার সময়ে। হঠাৎ করে করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্থবির হয়ে পড়ে সব ধরনের কার্যক্রম। তবে অর্থনীতি সচল রাখতে খোলা রাখা হয় ব্যাংকগুলো। কোনো ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখা খোলা রাখলেও জনতা ব্যাংক শুরু থেকে সব শাখা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ছালাম আজাদ বলেন, প্রচলিত যে ব্যাংকিং আমরা করেছি, সেটা এখন হবে না। প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। পুরো ব্যাংকিং খাতে যে সংকট চলছে তাতে অনেকে উদ্বিগ্ন। তবে আমি মনে করি, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা এখনো নিরূপণ করার সময় হয়নি। তবে যেভাবে কাজ চলছে তাতে ব্যাংকিং খাতে খুব বেশি ক্ষতি নিতে হবে না। নতুন নতুন খাতে আমরা ঋণ দিচ্ছি। উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির সব সচল হয়ে যাবে। তাতে আশা করি, আগামী সেপ্টেম্বরের পর পুরো ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনেক পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে। তবে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করে এখনো কিছু উদ্যোক্তার সুবিধা দেওয়া উচিত। অনেক উদ্যোক্তা এই সংকটের মধ্যে তাদের উৎপাদন ধরে রেখেছে। তবে রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ায় অনেকে নিয়মিত ঋণ শোধ করতে পারেনি। আবার আদেশ বাতিল হওয়ার কারণে তারা খেলাপি হওয়ায় এখন নতুন উৎপাদনে যেতে পারছে না। তাদের জন্য আমি মনে করি কিছু করার আছে। সে জন্য ২০১২ সালের বিআরপিডি সার্কুলার-১৫ সংশোধন করা উচিত। তাতে অনেক শিল্প উদ্যোক্তার ঋণ নিয়মিত করে নতুন বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আমাদের ঋণ বিতরণ শুধু নয়, আমরা এই সংকটের মধ্যে আদায়ের পরিমাণও বাড়িয়েছি। জনতা ব্যাংকের এমডি বলেন, আমার সৌভাগ্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছিলাম এবং আমি এই জায়গায় এসেছি। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে লড়াই করেছি বর্তমান এই সংকটের বিরুদ্ধেও আমরা জয়ী হব। সরকার প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে শিল্প খাতে ৮৫ হাজার কোটি টাকা, এসএমই খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা, কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছে। সব ব্যাংকের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরএমজি খাতে বিশেষ সুবিধার আরও অনেক প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন আছে। এসব বাস্তবায়ন হলে পুরো অর্থনীতি সচল হয়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, এত বড় সংকটকালে বিদ্যুৎ সমস্যা হয়নি। গ্যাস সমস্যা হয়নি। জ্বালানি খাতের সাপ্লাই স্বাভাবিক ছিল। তাই সব স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে না। ব্যাংকিং খাতে আগের মতো মুনাফা হবে না। সেটা চিন্তা করাও হবে ভুল। তবে অর্থনীতি সচল হলে ব্যাংক খাতও সচল হবে। উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য ধীরে চালু হচ্ছে। শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি জানান, জনতা ব্যাংকে প্রতিদিন সারা দেশে ৯১১টি শাখায় সরাসরি অনলাইনের যুক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সবার স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ পরিচালনা করছি। জনতা ব্যাংকে ৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন তিনজন। এরপরও আমরা কোনো শাখা লকডাউন করিনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে আমরা নিরলস কাজ করছি।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন