বর্তমান বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তিখাতের পথ-প্রদর্শকদের একজন বলা হয়ে থাকে বিল গেটসকে। সফল এই উদ্যোক্তার ক্যারিয়ার মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যায়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় বছরের পর বছর নিজের নাম ধরে রেখেছেন তিনি। কর্মস্থল থেকে অবসর নিয়ে গড়ে তুলেছেন দাতব্য সংগঠন, বিশ্বজুড়ে নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করছে সেটি।

সাফল্যে পেতে বই, নানা বক্তব্য ও ইন্টারভিউতে তরুণদের প্রতি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মাইক্রোসফটের এ সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সেগুলো তুলে ধরা হলো:

দ্রুত শুরু করে দিন: মাথায় কোনো আইডিয়া নিয়ে হয়তো আপনি ঘুরছেন। বিল গেটস বলছেন, না ঘুরে এখনই শুরু করে দিন। কারণ আজ যে আইডিয়া নিয়ে আপনি বসে আছেন, দেখা যাবে কয়েক বছর পর আপনার আইডিয়াটি কাজে লাগিয়ে ঠিকই আরেকজন সফল হয়ে গেছে। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না আপনার।

নিজের সেরাটাই দিতে হবে: জীবনটা এমন নয় যে, কয়েক মাস পর পর আপনার আগের ভুলগুলো শুধরে নেয়ার সুযোগ পাবেন। ফলে প্রতিটি সেকেন্ড আপনাকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিদিন সেরাটাই দিতে কাজে লাগাতে হবে আপনার।

‘না’ বলতে শিখুন: যত কিছুই করুন না কেন, দিনে কিন্তু ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আপনার হাতে নেই। ফলে চাইলেই আপনি সব কাজ করতে পারবেন না। কোন কাজকে আপনি না বলবেন, সেটি বুঝতে হবে। বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বক্তব্যে বলেছিলেন, জীবনের সেরা উপদেশটি আমি পেয়েছি বন্ধু ওয়ারেন বাফেটের কাছে থেকে। সে বলেছিলেন, তোমাকে ‘না’ বলতে জানতে হবে।

নিজেই নিজের বস: স্বপ্ন পূরণের পথে অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন। এতে নিজেকেই অপমান করা হবে। নিজেই এমন কিছু করুন যাতে অন্যরা আপনাকে অনুসরণ করে। প্রতিটি মানুষের স্বকীয় সত্তা ও চিন্তাশক্তি রয়েছে। নিজের স্বকীয়তাকে কাজে লাগান।

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন: দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন সফল উদ্যোক্তারা। কাজের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকে এই দৃঢ়তা তৈরি হয়। ফলে যে কাজটিই করছেন, তার প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকতে হবে। সফল মানুষেরা একমাত্র ভালোবাসা দিয়েই প্রতিটি কঠিন কাজকে সহজ করে ফেলে।

সমালোচনা নিতে হবে: বিজনেস অব দ্য থট বইয়ে সমালোচনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছেন বিল গেটস। তার ভাষ্য, মানুষের অভিযোগ আর অসন্তুষ্টি আপনাকে আরও ভালো করার সুযোগ করে দেয়। তিনি লিখেছেন, আপনার সব থেকে অসন্তুষ্ট কাস্টমারই আপনার শেখার সবচেয়ে বড় উৎস।

আশা হারানো যাবে না: আশা না হারানোর জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন বিল গেটস। ২০১৩ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি বলেন, লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে হতাশাবাদী হলে চলবে না বরং সব সময় আশাবাদী হতে হবে।

সাফল্যের হিসাব করুন: ২০০৩ সালে বিল গেটস তার মোস্ট পাওয়ারফুল আইডিয়া ইন দ্য ওয়ার্ল্ড বইতে বলেছেন, আপনি যদি সব সময় একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে, একটা নির্দিষ্ট সময় পরে তার হিসাব করেন যে, আপনি কতটুকু আগালেন তাহলেই লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারবেন। তবে এটা বলা যতটা সহজ, করা ঠিক ততটাই কঠিন, এমনটাও বলেছেন তিনি।

জীবন থেকে শিক্ষা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় বরং জীবনই হচ্ছে মানুষের জন্য সেরা স্কুল। আপনি যত বইপত্রই পড়েন না কেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যত পরীক্ষাই দেন না কেন এসবের কোনোটাই আপনাকে শেখাতে পারবে না কীভাবে জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। নিজের জীবন থেকে শিখেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে হবে আপনাকে।

জীবন সহজ নয়: যতই পরিশ্রম করুন না কেন, অনেক কিছুই আপনার মন মতো হবে না, অনেক কিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তবে যতই হোঁচট খান না কেন, আপনাকে আবারো দাঁড়াতে হবে। জীবনের কঠিন সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। একনিষ্ঠভাবে স্বপ্ন পূরণের পথে থাকলে সাফল্য ঠিক সময়েই আপনার দরজায় এসে কড়া নাড়বে।