দুই টিউববিশিষ্ট কর্ণফুলী টানেলের একটি টিউবের বোরিং ও রিং প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। দুই হাজার ৪৫০ মিটার টিউবের পুরোটার কাজ গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই শেষ হয়। আর এ প্রকল্পে কাজের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে এখন পর্যন্ত ৫৭ শতাংশ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্ণফুলী নদী দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত চট্টগ্রাম মহানগরীকে এক সুতোয় বাঁধতে সরকার দুই টিউববিশিষ্ট কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। তারপর থেকে বিরতিহীনভাবে প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে গত মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে নির্মাণকাজের গতি কিছুটা মন্থর হয়। তবে সীমিত পরিসরে কাজ চলতে থাকে। করোনাভাইরাসকে মাথায় রেখেই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে আবারও পুরোদমে কাজ চলছে বৃহৎ এ প্রকল্পের। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জেংজিয়াং শহরে টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্ল্যান্টে টানেলের সেগমেন্ট নির্মাণের কাজ চলছে। মোট ১৯ হাজার ৬৬১টি সেগমেন্টের মধ্যে ১৬ হাজার ৩৬৬টি সেগমেন্ট নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শতাংশের হিসাবে প্রায় ৮৩ দশমিক ৪৩ শতাংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১১ হাজার ৪৯৪টি সেগমেন্ট চট্টগ্রামের প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে এবং ৯ হাজার ৭২০টি সেগমেন্ট টানেলে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়োডাক্ট নির্মাণকাজের সাবস্ট্রাকচার নির্মাণ এবং সুপারস্ট্রাকচারের ২০৩টি প্রি-ফেব্রিকেটেড বক্স গার্ডারের মধ্যে ৭২টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে ২৯৩ জন চীনা নাগরিক রয়েছেন, যাদের সবাই বর্তমানে কর্মরত আছেন। প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি লিমিটেড আরও ৮৭ জন চীনা নাগরিকের জন্য বাংলাদেশি ভিসার আবেদন করেছে। ইতিমধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষ বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চিঠি দিয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার এ টানেল নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন হচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা দেবে চীন সরকার। এ প্রকল্পের মূল টানেল নির্মাণকাজের শতভাগ ব্যয় বহন করছে চীন সরকার। এদিকে প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজের আওতায় পতেঙ্গা ও আনোয়ারা অংশে ভূমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক ও ব্যক্তিদের ইতিমধ্যে ১৯৬ কোটি ৮ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন