- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

শরীয়তপুরে নিজ বাড়ির আঙিনায় মুক্তিযোদ্ধার শহীদ মিনার নির্মাণ

শরীয়তপুরের শিশু সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি মফিজুল ইসলাম (কবি ভাই)। তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিজ বাড়ির আঙিনায় ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে কবিকুঞ্জে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন।

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারত না কবিভাইর নিজ গ্রামবাসীরা। তবে এবারের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সেটি হবে না। কারণ ওই গ্রামের কবি ভাই নিজের টাকা দিয়ে তৈরি করেছেন একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার।

শরীয়তপুর পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের স্বর্ণঘোষ গ্রামে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই শহীদ মিনারে প্রথমবারের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন এ শহীদ মিনারে স্থানীয় শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী, জাতীয় কবিতা পরিষদ শরীয়তপুর জেলা শাখা সদস্যবৃন্দ ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এখানে।

জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি মফিজুল ইসলাম ১৯৫৩ সালের ১৫ জানুয়ারি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর সুবেদারকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবি মফিজুল ইসলামের বাবা মো. মেঘাই সরদার এবং মা হাফিজা খাতুন ছুটুবিবি। পারিবারিকভাবে কবি মফিজুল ইসলাম সাহিত্য ও সংস্কৃতি আবহে বড় হয়েছেন। বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।

১৯৭১ সালে তিনি পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান গ্রুপে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে মাদারীপুর নাজিম উদ্দিন কলেজে অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে তিন বছর মেয়াদি কৃষি ডিপ্লোমায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

১৯৮২ সালে তিনি ভেদরগঞ্জ থানা পরিষদ থেকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ২০০২ সালে শরীয়তপুর জেলা কৃষি মেলা পুরস্কার, ২০০৫ সালে ফরিদপুর কবি জসিমউদদীন হলে সংবর্ধনা ও নির্ণয়শিল্প গোষ্ঠী পুরস্কার, ২০০৮ সালে মাদারীপুর এম এম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে সংবর্ধনা ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য পুরস্কার, ২০১১ সালে বিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ের (পরিবেশ ও জীবন) জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক (রাষ্ট্রীয় পুরস্কার), সর্বশেষ ২০১৫ সালে জাতীয় সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা পদক অর্জন করেন।

তিনি বহু বছর যাবত দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যের আলোয় সুন্দর জীবন গঠন এবং প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় করণীয় বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করেন। এছাড়া তিনি একক কবিতা আবৃত্তি এবং নিজ খরচে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি ও গাছের চারা বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকতর প্রেরণা প্রদান করেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় ৬৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এবার ৫৫৩টি স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। বাকি বিদ্যালয়গুলোতেও শহীদ মিনার হবে। কবি মফিজুল ইসলাম (কবি ভাই) নিজের টাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করায় তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল।