- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

লাখ ছাড়িয়েছে আক্রান্ত

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর গতকাল ১০৩তম দিনে শনাক্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। বিশ্বের ১৮তম দেশ হিসেবে এক লাখ করোনা শনাক্তকারী দেশগুলোর তালিকায় প্রবেশ করল বাংলাদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৮০৩ জন। দেশে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৩৪৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৯টি এবং ৫৯টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ২৫৯টি। মোট নমুনা পরীক্ষা হলো পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৫০৩টি।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ২৮ দিন পর ৬ এপ্রিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়। ৪ মে ছাড়ায় ১০ হাজার, গত ২ জুন ছাড়ায় ৫০ হাজার। এর পরের ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে মাত্র ১৬ দিনে।

গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিন উপস্থাপনের আগে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, আমাকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল। সবার দোয়ায় আমি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছি। আপনারাও সতর্ক থাকবেন। তারপর অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃত্যুবরণ করা ৩৮ জনের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন এবং নারী সাতজন। বয়স বিবেচনায় ১০ বছরের মধ্যে একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দুজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে পাঁচজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুজন রয়েছেন। বাসিন্দা হিসেবে ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ জন, রাজশাহী বিভাগে একজন, খুলনা বিভাগে দুজন এবং বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের একজন করে রয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৪ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ১৪ জন।
বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অভিজ্ঞতা বিচারে বিশ্বে এবং বাংলাদেশে আরও দুই তিন বছর করোনাভাইরাস থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তবে বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে যা অনুমান করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তা হলো কিছুদিন পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার একই হারে নাও থাকতে পারে। গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমিও কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং আমাকে বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এখন সুস্থ হয়ে কয়েকদিন হলো অফিসে যোগদান করেছি এবং কাজ করছি। বক্তব্যের শুরুতে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং গুণীজনের মৃত্যুকে জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি জনবহুল এবং অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। অন্যদিকে করোনাভাইরাসও অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ কারণে অসতর্ক চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে এ দেশে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন। দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখলে কর্মহীনতা, আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া এবং অন্যান্য সামাজিক অর্থনৈতিক কারণেও ব্যাপক অপুষ্টি, রোগবালাই এবং মৃত্যু ঘটতে পারে। সে কারণে জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে।

বিশ্ব থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছুকাল পরে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চহার কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হলে অনেক লুকায়িত ও মৃদু উপসর্গের রোগীও শনাক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর নাও হতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি এক দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। আর করোনা শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য সবকিছুকে ঘিরে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যগত বিষয়ে জোরালো নজর দিয়েছেন। দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে কভিড-১৯ পরীক্ষার কাজ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত আরটিপিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রসারিত হবে। একই সঙ্গে সহজে করা যায় এমন পরীক্ষা চালু করা হবে এবং উপজেলাতে পরীক্ষা চালু করার প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের কাজ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে হাই ফ্লো নোজাল কেনোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরসহ অন্যান্য সুবিধা দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পরীক্ষার কিট ও পিপিইর যেন কোনো অভাব না হয় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ ও সরবরাহের পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতাল যেন সব কভিড এবং নন কভিড রোগীর ভালোভাবে চিকিৎসা দেন তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মূল্য নির্ধারণ ও তদারকি এবং প্রয়োজনীয় সব সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি সব খাত যেন দায়িত্ব পালন করে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে জোনিং ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কোনো স্থানে করোনা রোগ সংক্রমণ-প্রশমনের জন্য যদি কৌশলগত রেড জোন ঘোষণা করতে হয়ে তাহলে সেসব স্থানে যখন যেমন প্রয়োজন সেভাবে করা হবে। এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী কোনো দেশ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্যে যা করা সম্ভব এবং যা করা বাস্তবমুখী, সরকার সে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে আপনার সুরক্ষা আপনার হাতেই। যতদিন কভিড থাকবে ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। অবহেলা বা অসাবধানতা নিজেরই ক্ষতি করবে। লক্ষণ থাকলে অবহেলা করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। যে কোনো মূল্যে মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতেই হবে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানান, দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসকসহ আরও ১৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২৮ জন, নারী ১০৯ জন ও শিশু ২১ জন রয়েছে। বর্তমানে ২৩২ জন হোম আইসোলেশনে এবং প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ২৭ জন, হাসপাতালে ভর্তি ১১ জন এবং মারা গেছেন সাতজন। কুমিল্লা : নাঙ্গলকোট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, ওই উপজেলার জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা হযরত আলী, আশা এনজিওর নাঙ্গলকোট শাখার ম্যানেজার মনজুরুল হক, এক স্বাস্থ্যকর্মী, ওই স্বাস্থ্যকর্মীর ২২ মাসের শিশু, দেবিদ্বার উপজেলার এক চিকিৎসকসহ কুমিল্লায় নতুন করে আরও ১৬১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৩৭৮ জনে দাঁড়াল। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। মেহেরপুর : গাংনীতে নতুন করে পপি খাতুন (২৭) নামে এক গৃহবধূ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে গাংনী উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হলো ১৬ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ব্যাংক কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরও ৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৮৬ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হলো। মাগুরা : মাগুরায় নতুন করে আরও একজন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ জন। নোয়াখালী : জেলায় নতুন করে আরও ১০৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন এক হাজার ৫৮১ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৫৪৮ জন। চুয়াডাঙ্গা : জেলায় আরও ১৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগী শনাক্ত হলেন ১৬৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন দুজন। সুস্থ হয়েছেন ৮৯ জন।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন