- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

রাজস্ব ফাঁকি ধরতে নজরদারি বাড়িয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা

মহামারী করোনাভাইরাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনে মাঠপর্যায়ে কড়া নজরদারি বাড়িয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সূত্র বলছে, সারা দেশের সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরগুলোতে এখন ব্যাপক তৎপরতা চলছে। চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দার সাম্প্রতিক বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক গোয়েন্দারা ভালোভাবে কাজ করলে দেশ অপূরণীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। এ জন্য শুল্ক গোয়েন্দাদের সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নিষ্ঠা, সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আরও কঠোর হতে হবে। শুল্ক গোয়েন্দারা যে ধরনের সাহসিকতা, সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন, তাতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশের বন্দরগুলোতে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে ব্যাপক তৎপরতা চলমান রয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাসে আমদানি কম হলেও রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনের কাজ চলমান রয়েছে। দেশের সব সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে ফাঁকি এবং চোরাচালান রোধে সক্রিয় রয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। জানা গেছে, জনবল সংকটে প্রত্যাশা মোতাবেক চোরাচালানবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না শুল্ক গোয়েন্দা। ফলে চলমান অভিযানগুলোতে শুল্ক ফাঁকি ধরা পড়লেও অনেকেই থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবুও সীমিত জনবল দিয়েই বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, শুল্কবন্দরসহ সারা দেশে চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠেছে শুল্ক গোয়েন্দা। সংস্থাটি জল-স্থল ও আকাশপথে অবৈধ বাণিজ্যসহ আর্থিক অপরাধ ঠেকাতে চায়। এ জন্য এনবিআরে ২০১৬ সালের গত ২ সেপ্টেম্বর শুল্ক গোয়েন্দার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। ডগ স্কোয়াড-হেলিকপ্টার ও জাহাজসহ ৩ হাজার ১৬৮ জনবলের যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাও এখন ঝুলে আছে। এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দার একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাত্র অল্প কিছু কর্মকর্তা আর কর্মচারী দিয়ে চলছে সব কার্যক্রম। চাহিদার তুলনায় এটা খুবই নগণ্য। তবে জনবল বাড়ানোর একটি উদ্যোগে খুব একটা গতি নেই।

জানা গেছে, চোরাচালান ও অর্থ পাচারের মতো দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে শুল্ক গোয়েন্দাকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংস্থাটির অনুকূলে অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ বর্গফুট স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আদলে পুনর্গঠন করা হচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির কাজের পরিধি ও ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে অফিসের পরিধি বাড়ানোর জন্য স্থাপত্য অধিদফতরের অনুমোদন সম্প্রতি পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। হেলিকপ্টার, ফরেনসিক ল্যাব ও উচ্চপ্রযুক্তির গোয়েন্দাসামগ্রী অনুমোদন চেয়ে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব সরঞ্জামের মাধ্যমে চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি রোধে র‌্যাব ও বিজিবির মতোই দেশজুড়ে অভিযান চালাবে সংস্থাটি। আসামিদের রিমান্ড কক্ষ, তদন্তের শুনানি কক্ষ, গোপন সংবাদদাতা ও দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক ওয়েটিং রুম, মূল্যবানসামগ্রী সংরক্ষণাগার, আটক গাড়ি রাখার স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জনবল বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এখন দুর্নীতি-অনিয়মের অনেক তথ্য আসছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে সেগুলো খতিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। রুটিন কাজ করাই দুষ্কর হয়ে পড়ছে। জনবল ও লজিস্টিক বৃদ্ধির মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য র‌্যাবের সঙ্গে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পূর্ণাঙ্গ ডগ স্কোয়াড গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযান, রিমান্ডসহ গোয়েন্দা কাজে ব্যবহারের জন্য শুল্ক গোয়েন্দার জন্য একটি সশস্ত্র ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে শুল্ক গোয়েন্দা হাতকড়া কেনা ও তা চোরাকারবারিদের পরানোর অনুমতি চেয়ে এনবিআরে চিঠি দেয়।

জানা গেছে, চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে অর্থ পাচার এবং জঙ্গি অর্থায়নের নিবিড় যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। তাই দেশের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় সন্ত্রাসবাদ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য অবৈধ বাণিজ্য সংকুচিত করতে নিজেদের কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের ওপর নজর দিয়েছে রাজস্ব প্রশাসন। এমন প্রেক্ষাপটে সারা দেশের জল-স্থল ও আকাশপথে অবৈধ বাণিজ্যসহ আর্থিক অপরাধ ঠেকাতে ৩ হাজার ১৬৮ জনবল কাঠামো, ৩০টি ডগ স্কোয়াড, দুটি হেলিকপ্টার এবং ৫টি সামুদ্রিক জাহাজের প্রস্তাব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। ওই প্রস্তাবে বলা হয়- শুল্ক গোয়েন্দা চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে দৃশ্যমান বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এর সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট জনবল রয়েছে ৩৩৪ জন (সুপারনিউমারিসহ)। কিন্তু আছে প্রায় একশ কর্মকর্তাসহ কিছু কর্মচারী। এই সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে সামনে রেখে এবং ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা এখন সময়ের দাবি। প্রস্তাবে আরও বলা হয়- রাজস্ব আহরণ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখতে সম্প্রতি স্বর্ণ, মাদক, মুদ্রা ও অন্যান্য ক্ষতিকর পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধে শুল্ক গোয়েন্দার কার্যক্রম দৃশ্যমান এবং বিভিন্ন মহলে নন্দিত হয়েছে। এই দফতরের বর্তমান ভূমিকা সংসদেও প্রশংশিত হয়েছে। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে শুল্ক গোয়েন্দার সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রস্তাবিত জনবলের সার-সংক্ষেপে দেখা যায়- একটি মহাপরিচালক পদের সঙ্গে ৪টি অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদ সৃষ্টি করতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে নতুন অন্য পদগুলো হলো- ১০টি পরিচালক, ১৮টি যুগ্ম-পরিচালক, ৮২টি উপ/সহকারী পরিচালক, ১টি চিফ কেমিস্ট, ১টি ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ২টি টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার, ৬টি পাইলট, ৪টি ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, ১টি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, ৫৬টি প্রোগ্রামার, ১২৮টি রাজস্ব কর্মকর্তা, ৫১৮টি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ৬৩টি সহকারী প্রোগ্রামার, ৬৯টি কম্পিউটার অপারেটর, ১৮টি অফিস সুপাররিনটেনডেন্ট, ৫৫টি প্রধান সহকারী, ১২৫টি উচ্চমান সহকারী, ৫টি সাঁট-লিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, ২৮টি সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, ৫৯টি ক্যাশিয়ার, ১৫৫টি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ১৫১টি ডাটা এন্টি অপারেটর, ১৮২টি গাড়িচালক, ৬৫টি ফটোকপি মেশিন অপারেটর, ১১২টি ডেসপাস রাইডার, ৬৯টি সাব-ইন্সপেক্টর, ৫টি ডগ হ্যান্ডেলার ট্রেইনার, ৭২৪টি সিপাই, ৪০টি ডগ হ্যান্ডেলার, ১০টি স্পিড বোট চালক, ২৫৪টি অফিস সহকারী/এমএলএসএস, ৫৭টি নৈশপ্রহরী ও ৯০টি সুইপার পদে মোট ৩ হাজার ১৬৮টি জনবলের পাশাপাশি ৩০টি ডগ স্কোয়াডের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন