যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েছে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের অবরোধকে পাত্তা না দিয়ে বুধবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল চারটার ঠিক আগে একদল উগ্র ট্রাম্প সমর্থক ঢুকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে। মুহুর্তে সেখানে এক অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যা ইতিহাসে বিরল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গোলাগুলিতে এক নারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই ঘটনায় পুলিশ আটক করেছে ১৩ জনকে। দীর্ঘক্ষণ তাণ্ডব চলার পর অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে স্থগিত যৌথ অধিবেশন পুনরায় চালু হয়। কারফিউ জারি করা হয়েছে ওয়াশিংটন ও ভার্জিনিয়ায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (৬ জানুয়ারি) কংগ্রেস অধিবেশনের বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও রয়েছেন। সেই সমাবেশে বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকারের চেয়ারে বসে আছে এক ‘ভ্যাগাবন্ড’। সংসদের মাইক্রোফোন তুলে নিয়ে যাচ্ছে একজন। গরুর সিং মাথায় সাংসদদের আসনে আরেকজন। পার্লামেন্ট ভবনের দেওয়াল বেয়ে মই দিয়ে বেয়ে উঠতেও দেখা যায় অনেককে।

রয়টার্স জানায়, এই সমাবেশের অল্প একটু দূরে গিয়ে কয়েকশ ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এক পর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।

কংগ্রেসের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজের দেয়া ভোটগুলো গোনার সময় ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় খোদ কংগ্রেস ভবনের ভেতর বাহির। পুলিশের টিয়ারসেল, ফাঁকাগুলিতে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টার মধ্যেই আসে কারফিউর ঘোষণা।

যুক্তরাষ্ট্রে গত ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় প্রত্যয়ন করতে কংগ্রেসের এই অধিবেশনের কয়েক ঘন্টা আগেই ওয়াশিংটন শহরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা বড়ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সেই বিক্ষোভ একপর্যায়ে সহিংসতার রূপ নেয়।

ট্রাম্প সমর্থকরা এসময় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়া সেখানে ঘটেছে গোলাগুলির ঘটনাও। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ পর্যন্ত একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ওয়াশিংটনের মেয়রের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) ভোর ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জো বাইডেন। এই ঘটনাকে বিক্ষোভ নয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলেছেন তিনি।

সংঘর্ষের মধ্যে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস সদস্যদের বিশেষ পাহারায় অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে নিরাপত্তারক্ষীরা। ট্রাম্প সমর্থক কয়েকজন আইনপ্রণেতার নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যেই সেখানে এই গোলযোগের সৃষ্টি হয়।

মিশিগানের কংগ্রেস সদস্য হ্যালি স্টিভেন্স টুইটে লিখেছেন, ‘আমার অফিসের এক জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এটা আমাকে লিখতে হচ্ছে।’

জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা বুধবার (৬ জানুয়ারি) কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে বসেন। এর আগেই উগ্রপন্থি সংস্থার সদস্যসমেত ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। সেখানেই নির্বাচনের পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।