এবার মেহেরপুর জেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। কাঁঠাল বাগান ও জেলার সরকারি রাস্তার দুই পাশে সরকারি-বেসরকারিভাবে লাগানো কাঁঠাল গাছগুলোতে কাঁঠালে ভরে থাকতে দেখা যায়। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাংনী-হাটবোয়ালিয়া সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে কাঁঠালের সারিবদ্ধ গাছ পথচারীদের মুগ্ধ করে। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে প্রায় ১০০ কিমি রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে গাছে কাঁঠাল ঝুলে আছে। আঠালো এই ফলটি আকারে খুব একটা বড় না হলেও স্বাদে অনন্য। চলতি মৌসুমে জেলায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন কাঁঠালের ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ। তবে ১০০ কিলোমিটারজুড়ে কয়েক হাজার কাঁঠাল গাছের কোনো পরিসংখ্যান নেই কৃষি বিভাগে। কৃষি বিভাগ বলছে, অনুকূল আবহাওয়ায় গাছে ব্যাপক কাঁঠাল ধরেছে। বাজারে পাকা কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে। কাঁঠাল উৎপাদনে কোনো খরচ না থাকায় চাষিরা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর কাঁঠাল রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করছেন চাষিরা। গাংনীর রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. গোলাম সাকলাইন জানান, গাংনী-হাটবোয়ালিয়া সড়কসহ তার ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় লাগানো বিভিন্ন গাছের মধ্যে অন্তত ১০ হাজার কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এসব গাছের ফল রাস্তার পার্শ্ববর্তী মানুষ ভোগ করে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৩টি উপজেলার সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়েছে। তবে সরকারি রাস্তার দুই পাশে সরকারিভাবে বনায়ন ও বেসরকারিভাবে লাগানো কাঁঠাল গাছ এই পরিসংখ্যানের বাইরে। জেলার ১৮টি ইউনিয়নের সর্বত্রই অনেক কাঁঠাল গাছ রয়েছে, যার আনুপাতিক সংখ্যা অন্তত ২ লক্ষাধিক এবং একটি কাঁঠাল গাছে গড়ে ২০ থেকে ৭০টি পর্যন্ত কাঁঠাল ধরেছে। প্রতিটি কাঁঠাল আকারভেদে ৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। শ্রাবণ মাসে কাঁঠাল পাকার উৎকৃষ্ট সময়। তবে এবার জ্যৈষ্ঠ মাসেও পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁঠাল বাজারে বেচাকেনা হয়েছে। কৃষকরা জানান, কাঁঠালের একটি বড় গুণ হলো এর কিছুই ফেলে দেওয়া লাগে না। কাঁঠালের বিচি বা আঁটি এবং কাঁচা কাঁঠালের মোচা দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁঠালের খোলস ও পাতা গরু-ছাগলের প্রিয় খাবার। এ ছাড়া কাঁঠালের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি করলে ভালো হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কামরুল হক মিয়া জানান, জেলায় এ বছর কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের পাশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শত শত গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির আঙিনায় কাঁঠাল চাষ করা হচ্ছে। কাঁঠাল চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সারা বছর যাতে কাঁঠালের চাষ করা যায় এ জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষের সুস্থ-সবল স্বাস্থ্যের জন্য ও ভিটামিনের অভাব পূরণে সুস্বাদু কাঁঠাল খাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান এই কৃষি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, পাকা কাঁঠালে ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম প্রোটিন, দশমিক ৩০ মিলিগ্রাম ফ্যাট, ২৬ দশমিক ১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম লৌহ, দশমিক ১১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ রয়েছে। এ ছাড়া কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, এবং ই রয়েছে। এ ছাড়া পাকা কাঁঠালের বিচি দিয়ে সুস্বাদু তরকারি রান্না করা হয়।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন