- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

মুগদায় টেস্ট থেকে রিপোর্ট শুধুই ভোগান্তি

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এখন সাধারণ রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এটি পূর্ণাঙ্গ কভিড-১৯ হাসপাতাল। তবুও করোনাভাইরাসের সেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর স্বজনরা। নানা ভোগান্তি ও হয়রানির কথাই বলছেন তারা। ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটির ৩২০ শয্যা করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বরাদ্দ। সাধারণ রোগী না থাকায় অন্য শয্যাগুলোও ফাঁকা।

গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ১৬৩ জন। এর মধ্যে আইসিইউ বেডের ১৪টিতেই ছিল করোনা রোগী। ১৫৭টি শয্যা ফাঁকা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, করোনা টেস্ট থেকে শুরু করে রিপোর্ট পাওয়া, ভর্তি সব খানেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। হাসপাতালের আঙিনায় কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয়কর্মীদের অবাধ বিচরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। করোনা চিকিৎসার শুরুতে আনসারের হাতে রোগী বা তার স্বজনরা নাজেহাল হলেও এখন অবশ্য তা কমেছে বলে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন। নানা ভোগান্তির বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রওশন আনোয়ার বলেন, ‘করোনা রোগীর সংখ্যা কেন কমছে তা আমি বলতে পারব না। তবে এখন মানুষ অনেক সচেতন। অনেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। রোগীরা যাতে কোনো দুর্ভোগে না পড়েন সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখছি। রোগীরা এখানে ভোগান্তিতে পড়ছে তা সঠিক নয়।’ জানা গেছে, মুগদা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরুর প্রথমদিকে চরম বিশৃঙ্খলা ছিল। রোগীরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েন। চিকিৎসক, নার্স এমনকি আনসারদের হাতে রোগী ও স্বজনদের নাজেহাল হতে হয়। রোগীদের কভিড ওয়ার্ডে রেখে কোনো ধরনের খোঁজ-খবর না নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ কারণে এই হাসপাতালে দুই শতাধিক রোগীর মৃত্যু হয় বলে অনেকে মনে করেন। করোনা ইউনিটে বেড থেকে ৯০ বছর বয়সী রোগী পড়ে আহত হলেও খোঁজ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে দুই ঘণ্টা হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে সাধারণ রোগী নেই। যারা আসছেন তারা সবাই শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গে আক্রান্ত। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত তিনজন নার্স জানান, এই হাসপাতালকে কভিড-১৯ ঘোষণার আগে জরুরি বিভাগে ভিড় লেগেই থাকত। দিনে ৫০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত রোগী আসতেন। মাঝে কোনো সাধারণ রোগীই আসেনি। এখন প্রতিদিন গড়ে ৮ জন করে রোগী পাওয়া যায়। এর মধ্যে সাধারণ রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কভিড-১৯ বিভাগে পাঠানো হয়। এদিকে জরুরি বিভাগের গেটে কুকুরের উৎপাত লক্ষ্য করা যায়। হাসপাতালের নিচতলায় কয়েকটি কুকুরকে দৌড়াদৌড়ি করতেও দেখা গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি কুকুরকে জরুরি বিভাগের মূল ফটকে শুয়ে থাকতেও দেখা যায়। বিভিন্ন জায়গায় আনসার সদস্যরা দায়িত্বে থাকলেও হাসপাতাল থেকে কুকুর তাড়ানোর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। হাসপাতালের মূল ভবনের নিচতলায় একপাশে দেখা যায় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। সেখানে রোগী ও তার স্বজনদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

সামাজিক দূরত্ব না মেনেই রিপোর্ট সংগ্রহ করতে দেখা যায়। অনেকের মুখে ছিল না মাস্কও। যাদের করোনা নেগেটিভ রেজাল্ট আসছে তারা হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন। কাউকে কাউকে বিষণœ মনেও ফিরতে দেখা গেছে।
গার্মেন্টকর্মী কামরুন নাহার জানান, ২০০ টাকা ফি দিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার করোনা পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন। তিনি রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তার রেজাল্ট নেগেটিভ হয়েছে। এই রিপোর্টের কপি গার্মেন্টে জমা দিয়ে কাজ শুরু করবেন বলে জানান।

সায়েদাবাদ থেকে আসা এক বয়োবৃদ্ধ করোনা রোগীর ছেলে আবদুর রহিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তার বাবা বেশ কয়েক দিন ধরেই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি। বাবার ঠিকমতো সেবা-যত্ন নেওয়া হয় না। প্রেসার বা রক্ত চেকআপ করানো হয় না। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলেও খুঁজে পাওয়া যায় না নার্সদের। চিকিৎসকরাও ঠিকমতো দেখভাল করেন না। এখানে পদে পদে ভোগান্তি চলছে।

৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নামেও পরিচিত। যার নির্মাণকাজ শুরু ২০০৬ সালে। ২০১৩ সালে হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। ২০১৪ সালের শুরুতে রোগী ভর্তি শুরু হয়। হাসপাতাল ভবনটি ১৩ তলাবিশিষ্ট। ২০১৫ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজ ঘোষণা করেন। কলেজের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কলেজটিতে কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষাদান চলছে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন