মুহম্মদ জিয়াউদ্দিন: আল্লাহ-প্রদত্ত জীবনবিধান ইসলামে মা-বাবার হক আদায় করা সন্তানসন্ততির প্রতি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোনো সন্তান মা-বাবার এ হক লঙ্ঘন করলে তাকে আখিরাতের জীবনে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি তো মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। ফিরে আসতে হবে তো আমারই কাছে।’ সুরা লুকমান, আয়াত ১৪। এ সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত।’ তিরমিজি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে আরজ করল ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার সদ্ব্যবহার ও সৌজন্যমূলক আচরণ লাভের ক্ষেত্রে কে সর্বাপেক্ষা অধিকারী? তিনি বললেন, তোমার মা। সে জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে আবার জিজ্ঞেস করল এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার বাবা।’ বুখারি, মুসলিম। মা-বাবার হক আদায়ের ওপর সন্তানের আখিরাতের জীবনের ভালোমন্দ নির্ভরশীল। যারা এ হক যথাযথভাবে আদায় করবে তাদের জন্য মিলবে বেহেশতের সুশীতল ছায়া। যারা এ হক উপেক্ষা করবে তাদের ঠাঁই হতে পারে দোজখে। হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘জনৈক ব্যক্তি আরজ করল ইয়া রসুলুল্লাহ! সন্তানসন্ততির প্রতি মা-বাবার কী হক বা পাওনা? তিনি বললেন, তারা হলেন তোমার বেহেশত ও দোজখ।’ ইবনে মাজাহ। হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো নেককার সন্তান তার মা-বাবার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায় তখন আল্লাহ প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি মকবুল হজ লিপিবদ্ধ করেন। সাহাবিরা আরজ করলেন, যদি সে দৈনিক একশবার দৃষ্টিপাত করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ অতি মহান, অতি পবিত্র। হজরত আবু সাইদ সায়েদি (রা.) বলেন, ঘটনাক্রমে আমরা রসুল (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ বনি সালামার জনৈক ব্যক্তি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করল, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমার মা-বাবার ইন্তেকালের পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের কোনো কিছু আছে কিনা? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তাদের জন্য দোয়ায়ে খায়র করা এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাদের কৃত অপূর্ণ ওয়াদা অঙ্গীকারগুলো পরিপূর্ণ করা। আর আত্মীয়তার যেসব সম্পর্ক তাদের দ্বারা রক্ষা করা হতো, সেসব সম্পর্ক বহাল ও জারি রাখা। এ ছাড়া মা-বাবার বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।’ আবু দাউদ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মা-বাবার হক আদায়ের তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।