- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

মানুষের আদালতে স্বার্থপরদের বিচার হবে এক দিন: আ জ ম নাছির

করোনা যুদ্ধে নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়া চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, এই ক্রান্তিকালে সুযোগ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা আত্মকেন্দ্রিক, তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেই সব স্বার্থপর মানুষ দেশের কাছে, ইতিহাসের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকবেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেয়র নাছির চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি, সংকট- সমাধানের পথ নিয়ে বিস্তারিত বলেন।  বাংলাদেশ প্রতিদিন

তিনি বলেন, সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা- পর্যবেক্ষণে সরকারের সকল পর্যায় থেকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। বেসরকারি পর্যায়ের অনেকেও সহায়ক। কিন্তু তারপরও যারা এখনো ঘরে বসে আছেন, তাদের পরিণাম ভালো হবে না। তাদের দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ। মেয়র নাছির অবশ্য শুরু থেকেই চট্টগ্রামে করোনা যুদ্ধে সেনাপতির ভূমিকা রাখছেন। দলের বাইরেও তাঁর এই ভূমিকা ব্যাপক প্রশংসিত। তিনি সরকারি সহযোগিতা, প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো উপহার ছাড়াও নিজের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক প্রতিষ্ঠান থেকে ত্রাণ সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছেন লাখো মানুষের হাতে। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন উপহার। নিজ হাতে জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া, ত্রাণ বিতরণ, সচেতনতা তৈরির কার্যক্রমসহ দিনের পর দিন লড়ে চলেছেন এই চট্টল মেয়র। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মেয়র নাছির চট্টগ্রাম শহরের ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ১৫০ জন করে অসচ্ছল নেতা-কর্মীসহ ৬৪৫০ জনকে শুধু ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার উপহার পাঠিয়েছেন। শহরের ২৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দলীয় নেতা-কর্মীর বাইরেও প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০ থেকে ১৫০ জন করে মানুষের জন্য ত্রাণ সাহায্য পাঠিয়েছেন। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা যারা ত্রাণ সহযোগিতা প্রকাশ্যে চাইতে পারেননি, তাদের এসএমএসের মাধ্যমে চাওয়ার সুযোগ দিয়ে শহরের প্রায় সব কটি এলাকায় নিজস্ব তহবিল থেকে উপহার পাঠিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নগদ সহযোগিতা দিয়েছেন প্রায় এক কোটি টাকার। এ ছাড়া সরকারের পাঠানো উপহার সামগ্রীর প্যাকেট সংযুক্তি, প্রিন্ট করাসহ প্রতিটি প্যাকেটে সাবান, মাস্ক, আলু, ডাল যুক্ত করাসহ বহুবিধ ব্যয় করেছেন নিজস্ব তহবিল থেকেই। শুরু থেকে করোনা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাইকিং, বিজ্ঞপ্তি-বিজ্ঞাপন প্রকাশ তো ছিলই। সিটি করপোরেশনের সেবার পরিধি বিস্তৃত করার উদ্যোগ নিয়ে মেয়র চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সিটি হল কমিউনিটি সেন্টারকে আড়াইশো শয্যাবিশিষ্ট ‘আইসোলেশন সেন্টারে’ পরিণত করা, ব্র্যাকের সহযোগিতায় পর্যায়ক্রমে ১২ টেস্টিং বুথ চালুর উদ্যোগ নেন। কার্যত নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়ে যাওয়া করোনা যুদ্ধে বন্দর শহরে প্রধানমন্ত্রীর সেনাপতি সিটি মেয়রের কাছে এখন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা সর্বোচ্চভাবে চালু করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর গতকাল এ নিয়ে তিনি উপর্যুপরি তিনটি সভাতেই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এর সঙ্গে বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের এক সভায় মেয়র সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তার অবস্থান। কভিড-নন কভিড রোগীর চিকিৎসা না করানোয় মৃত্যুর খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্লিনিক মালিকদের। একই সঙ্গে তিনি চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের যারা এখনো কাজে যোগ দেননি তাদেরও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। চিকিৎসা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের মা-বাবা বা কোনো স্বজন মারা গেলে কেমন লাগবে, সেই প্রশ্নও করেন মেয়র নাছির। মেয়র নাছির বলেন, আপনারা তো ফ্রিতে চিকিৎসা দিবেন না। টাকা নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতাল করার জন্য লাইসেন্স নিয়েছেন কি রোগীদেরকে মেরে ফেলতে? জনগণের সঙ্গে প্রতারণা কেন করছেন আপনারা? প্রশ্ন করেন মেয়র। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনারা প্রণোদনা চাইবেন কিন্তু মানুষকে সেবা দিবেন না সেটা হয় না। কোনো রোগী হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কভিড বা নন-কভিডের সার্টিফিকেট খোঁজে। কিন্তু একজন মানুষ কীভাবে সঙ্গে সঙ্গে এই সার্টিফিকেট দিবে। অন্তত তাকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া রোগী অন্য কোনো রোগ নিয়েও ভর্তি হতে পারে। মেয়র বলেন, এ সভা শেষ সভা। আর কোনো অনুরোধ করা হবে না। এবার অ্যাকশন শুরু হবে। যদি কোনো রোগী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায় বা আপনারা চিকিৎসা না দেন তবে এর পরিণাম ভালো হবে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউসের সঙ্গে জুম অ্যাপসের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি মুখ্য সচিবকে বলেন, ‘আজকে সকালে আমাদের থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি সগির স্ট্রোক করেছিলেন। তাকে তিন চারটা হাসপাতালে নেওয়া হলেও কোনো হাসপাতালেই সিট খালি নেই এমন অজুহাতে ভর্তি করায়নি। পরে যখন পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলো তখন চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন তিনি আর বেঁচে নেই।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রামের টেস্টিং বুথ এবং আইসোলেশন সেন্টারের সংকট কেটে যাবে। অক্সিজেনসহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা সহযোগিতা নিশ্চিত হবে। এখন প্রয়োজন মনোবল চাঙ্গা রাখা, সবার সহযোগিতা ও সমন্বয়। তিনি বলেন, জাতির এই দুঃসময়ে যারা মানুষের পাশে নেই, মানুষের আদালতে তাদের বিচার হবে এক দিন।