- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

ভোগান্তির ভয়ে টেস্টে অনীহা

রাজধানীর আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন। প্রায় চার দিন ধরে জ্বর, কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে বাসায় রয়েছেন। করোনা টেস্ট করাতে বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করেও সিরিয়াল পাননি। গিয়েছিলেন শাগবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতার ভবনের সামনেও। সেখানেও টেস্ট করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাড়া পাননি হটলাইন নম্বরে একাধিকবার কল করেও। নতুন কোনো বিড়ম্বনার ভয়ে টেস্টের হাল ছেড়ে পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। জাহাঙ্গীর হোসেন তো টেস্ট করার চেষ্টা করেও পারেননি। কিন্তু জ্বর, কাশি ও গলাব্যথার মতো করোনা উপসর্গ নিয়েও অনেকে টেস্ট করাতে চান না শুধু ভোগান্তির ভয়ে।

উপসর্গ থাকা অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগালের মধ্যে সেবাকেন্দ্র না থাকা, সেবার মাধ্যম সহজ না হওয়া এবং সমাজের বিরূপ আচরণ এবং ফলাফল পজিটিভ হলে বাড়ি লকডাউন হবে আশঙ্কায় তারা করোনাভাইরাস শনাক্তের টেস্ট করাতে উৎসাহ হারিয়েছেন। এদের অধিকাংশই ঘরোয়া টোটকা নিচ্ছেন। কেউ কেউ পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন।

জানা গেছে, সরকারিভাবে সারা দেশের ৬১টি ল্যাবের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে রয়েছে ২৭টি ল্যাব। ঢাকা শহরের যেসব স্থানে করোনা পরীক্ষার নমুনা নেওয়া হয় এসব স্থানে প্রতিদিন লম্বা লাইন দেখা যায়। কিছু কিছু স্থানে কয়েকদিন আগে থেকে যোগাযোগ করেও পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করোনা আক্রান্ত, উপসর্গ আছে এমন এবং আনুষঙ্গিক সব রোগীর বিড়ম্বনার শেষ নেই। বেসরকারি হাসপাতালে ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া টেস্ট করানোর সুযোগ থাকলেও খরচ বেশি হওয়াতে অনেকেই যেতে নারাজ।
যাত্রাবাড়ী এলাকার এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে চারজনের মধ্যেই করোনা উপসর্গ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই পরিবারের এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিন চার দিন ধরে আমার জ¦র, কাশি ও গলাব্যথা। আব্বু ও দুই বোনের জ¦র, কাশি আমার দুএকদিন আগে থেকে। কিন্তু সবার কাছে টেস্ট করানো নিয়ে যে ভোগান্তির কথা শুনেছি, তাই আমরা আর টেস্ট করানোর চেষ্টা করিনি। তিনি বলেন, আর টেস্ট করেই কী লাভ। যদি রেজাল্ট পজিটিভ হয়, তাহলে তো আর কোনো ওষুধ নেই। অহেতুক বাড়িটা লকডাউন করে দিয়ে যাবে। এতে উল্টো বাড়ির অন্য বাসিন্দাদের ভোগান্তি। ঘরোয়া চিকিৎসায় নিজেরা ভালো আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। টেস্টে অনীহার বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ মূলত সর্দি, কাশি, গলাব্যথা। টেস্টের সুবিধা না পেলেও চিকিৎসা তো থেমে থাকবে না। তবে ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে বলে জানান তিনি।

ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম করোনা আক্রান্তের পরীক্ষা হচ্ছে। দেশে পরীক্ষার হার মাত্র ০.২৯ শতাংশ। যা সারা বিশ্বে ১৪৯তম। দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৬১টি ল্যাবে প্রায় ৮৫টির মতো পিসিআর মেশিন দিয়ে প্রায় ২৪ হাজার নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। সর্বশেষ ১৪ দিনে গড়ে ১৩.৬ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জনবল সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে নমুনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ভুল প্রতিবেদন আসছে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে মাত্র একটি পরীক্ষাগারের মাধ্যমে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। এ সময়ে নির্ধারিত হটলাইনে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পরীক্ষার জন্য যোগাযোগ করে। তার মধ্যে পরীক্ষা করা হয় মাত্র ৭৯৪টি। ঢাকার বাইরে পরীক্ষার সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয় ২৫ মার্চের পর। ততদিনে সীমিত আকারে কমিউনিটি পর্যায়ে সংক্রমণ বিস্তার শুরু হয়ে যায়। দেশে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর আইইডিসিআরের হটলাইনে ১৪ জুন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ১০ লাখ ফোন কল আসলেও পরীক্ষা হয় মাত্র পাঁচ লাখ। নানা ভোগান্তির ফলে ৫৭ শতাংশ হাসপাতাল প্রয়োজনের চেয়ে অর্ধেক সংখ্যক পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষার ফল পেতে আট থেকে ১০ দিন পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন