ব্যাংক ঋণের সুদ হার না বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। শনিবার (৫ নভেম্বর) সকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ব্যাংকিং ও লিজিং বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সুদহার বাড়ালে ঋণগ্রাহক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা আরও বেশি চাপে পড়বে। ইউক্রেনে সংকটের কারণে এরই মধ্যে কাঁচামাল, জাহাজভাড়া ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সুদহার বাড়লে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় ও ব্যবসার খরচ বাড়বে। কোভিডের সংকট পার করে, এখনো বাড়তি চাপ সামলানোর পরিস্থতি তৈরি হয়নি। তাই সুদহার বাড়ালে নতুন খেলাপি তৈরির ঝুঁকি তৈরি হবে।

শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি জানিয়ে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ কমে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবেন। যা ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের জন্য হুমকি স্বরূপ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের বৈশ্বিক সংকটের সমাধান হিসেবে কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুপারিশ করেন তিনি।

পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে জ্বালানি খরচ কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ডলার সংকট সমাধানে ব্যাংকিং সেবাকে আরও কার্যকর করাসহ খরচ কমানো প্রয়োজন।

এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন ও আমদানি করতে না পারায় স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসায়ীরা ঋণ খেলাপিতে পরিণত হচ্ছেন। শিল্পোৎপাদন অব্যাহত রাখতে এখনই প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক এ.কে.এম শহীদ রেজা। তিনিও ঋণের সুদহার না বাড়ানোসহ গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের আহ্বান জানান।

আর দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার, অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সাধারণ পণ্য আমদানি-এ তিন খাতে ডলারের সুষম বন্টন ডলার সংকট সমাধানে সহায়ক হত বলে মনে করেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী।

এফবিসিসিআইর সহসভাপতি ও কমিটির কো-চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীর ডলার সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জানিয়ে খাতভিক্তিক ডলার মূল্য নির্ধারণ ও সংকটে দায়ী ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত অবস্থানের আহ্বান জানান।

উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংক খাতের সমান সুবিধা লিজিং কোম্পানিগুলোর জন্যও করা যায় কিনা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম।

ব্যাংকগুলো যাতে বিদেশি ঋণ নিতে পারে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইর পরিচালক এমজিআর নাসির মজুমদার। আরেক পরিচালক ড. নাদিয়া বিনতে আমিন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সহজীকরণের আহ্বান জানান।

এদিকে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিক্ল্পনা গ্রহনের আহ্বান জানান হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী।করোনাকালে পরিবহন খাত সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে এ খাতে লিজিং থেকে সহযোগিতাসহ আলাদা প্রজ্ঞাপনের দাবি করেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাবু রমেশ চন্দ্র ঘোষ।

আর ডলার সংকট সৃষ্টিতে জড়িত ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান নাসিব সভাপতি মির্জা নুরুল গণি শোভন, সিআইপি। এছাড়া ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কামনো, ডলার পাচার বন্ধের ব্যবস্থা, আন্ডার ইনভয়েসিং সমস্যা সমাধান, রেস্তোরাঁ খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের আহ্বান জানান বক্তারা।