প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ ও লোভ-লালসা উপেক্ষা করে ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে গেলেই নিজেদের ত্যাগী নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। নিজেদের চাহিদা উপেক্ষা ও ত্যাগ স্বীকার করে সামনে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু গড্ডালিকা প্রবাহে অর্থ সম্পদের পেছনে ছুটলে ঐ অর্থ সম্পদেই ভেসে যেতে হয়। তাতে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাও থাকে না, দেশ এবং মানুষকেও কিছু দেওয়া যায় না।

বুধবার (৩১ আগস্ট) শোকাবহ আগস্টের শেষদিনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুটি প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’ এবং ‘জয়বাংলার’ মোড়ক উন্মোচন করেন। সভার শুরুতে জাতির পিতা ও বঙ্গমাতাসহ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহিদ এবং ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মানবতার সেবার পাশাপাশি লেখাপড়া শিখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি আমি চাই। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব আসবে, সেজন্য আমাদের আজকের প্রজন্ম বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের প্রস্তুত করবে।

তিনি বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের যুগ। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। কেননা, দেশ চালাতে গেলে শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। তেমনি ইতিহাস জানতে হবে এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের খুনিদেরই শুধু এদেশে পুরস্কৃত করা হয়নি, ৭ মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাধীনতার পুরো ইতিহাসটা মুছে ফেলে দিয়ে আবিষ্কার করা হলো এক মেজর হুইসেল দিল আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। আর এজন্য সংগ্রামের যে পথ ও ইতিহাস সেটা তাদের জানা নেই। তাই আমি বলবো, ছাত্ররাজনীতি করতে হলে ইতিহাস জানতে হবে।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন এবং সাইদুর রহমান হৃদয়, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান ও জুবায়ের আহমেদ এবং ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জীব চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সভা সঞ্চালনা করেন।

দেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ছাত্রলীগ সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, আমি জানি ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক কথা লেখা হয়। এতবড় একটা সংগঠন আর আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই ভেতরে ঢুকে যায় এবং নিজেরাই গোলমাল করে, বদনামটা পড়ে ছাত্রলীগের ওপর।

তিনি অনুপ্রবেশকারী সম্পর্কে সংগঠনের নেতৃত্বকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, ছাত্রলীগকে সংগঠন করার সময় গ্রুপ ভারি করতে আলতু ফালতু লোক দলে ঢোকালে চলবে না। তাতে নিজেদের, দলের এবং দেশের বদনাম হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পেছনে লোক লেগেই আছে এবং লেগেও থাকবে। ছাত্রদল কত অপকর্ম করে গেছে সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু কিছু হলেই বড় নিউজ। সেজন্য নিজেদেরই ঠিক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে তার হাতে তৈরি সংগঠন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি, আমাদের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। আর সারা বাংলাদেশে একটি মানুষ ও গৃহহীন থাকবে না। তিনি এজন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকার ভূমিহীন-গৃহহীনদের তথ্য সংগ্রহ করে তাকে দিতে বলেন, যেন তিনি তাদের জন্য গৃহনির্মাণ করতে পারেন।

Md Hanjala Taha