- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

বাবার কাছে যেন অকৃতজ্ঞ সন্তান না হয়ে উঠি

ছবি: সংগৃহীত।

ভাইভা বোর্ডে কোম্পানির ডিরেক্টর ছেলেটির ভাইভা নিয়ে চমৎকৃত হয়ে বললেন, এবার তোমাকে শেষ একটা প্রশ্ন করি, ‘তোমার বাবা কি করেন?’ ছেলেটি উত্তর দিল, আমার বাবা কাপড় পরিস্কার করেন। তখন ডিরেক্টর ছেলেটিকে তার হাত দেখাতে বললেন। ছেলেটি তার পরিচ্ছন্ন এবং মোলায়েম হাতটি দেখালো।

এবার ডিরেক্টর বললেন, তুমি কি কখনো তোমার বাবার সাথে কাপড় পরিস্কার করেছ? তখন ছেলেটি বললো, আমার বাবা কখনোই এই কাজগুলো করতে দিতেন না। তিনি সবসময় বলতেন, তুমি বেশি বেশি বই পড়ো, তোমার পড়ার বাইরে কিছুই করা লাগবে না।

তখন ডিরেক্টর বললেন, তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে। তুমি আজ বাড়িতে গিয়ে তোমার বাবার হাতটা পরিস্কার করে দিবে এবং আগামিকাল আমার সাথে দেখা করবে। ছেলেটি কেমন যেন অসুখী বোধ করলো।

সে বাড়িতে এসে তার বাবার হাত পরিস্কার করে দিতে চাইলো। ছেলেটির বাবা কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন। এই প্রথম ছেলেটি তার বাবার হাত দেখে চমকে উঠলো। ওর হাতটি কত মোলায়েম, আর ওর বাবার হাতের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেছে, কাপড় কাঁচতে কাঁচতে হাতের তালু কুঁচকে গেছে, কেমন যেন খসখসে হয়ে গেছে ওর বাবার হাত দুটি, একটুও কোমলতার পেলব নেই!

বাবার হাত দুটি ধরে রাখতেই ছেলেটির চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকলো। এই সেই হাত যে হাত দিয়ে মানুষটি দিনের পর দিন কাপড় পরিস্কার গেছে শুধুমাত্র তার সন্তানের ভালো থাকার কথা ভেবে, সন্তানের পড়ার খরচ যোগাড় করার অভিপ্রায়ে। মানুষটি এতটা কষ্ট করেছেন সন্তান মানুষ করতে কিন্তু সেটি নিয়ে কখনোই তার বিন্দুমাত্র কষ্ট অনুভব হয়নি।

পরদিন ডিরেক্টরের সাথে দেখা করার পর ডিরেক্টর ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার বাবার কাছে গিয়ে কি শিখেলে? তখন ছেলেটি বললো, ‘ আমার বাবা না থাকলে আজ আমি যা হয়েছি তার কিছুই হতে পারতাম না!’
তখন ডিরেক্টর ছেলেটিকে বললেন , তোমাকে চাকরিটা দিলাম কারণ তুমি তোমার জীবনে অন্যের অবদানকে স্বীকার করতে শিখেছ।

ছেলেটির বাবার মতো আমার-আপনার বাবা তার সন্তানের জন্য জীবনের সব স্বাদ-আহলাদ বিসর্জন দিয়েছেন। নিজের জীবনের রক্ত জল করে সন্তানকে মানুষ করেছেন। সংসারের সব ঝড়-ঝাঞ্জা উপেক্ষা করে সন্তানকে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন। নিজে ভালো খাবার না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন।

নিজে ভালো জামা-কাপড় না পরে সন্তানকে সবচেয়ে ভালোটা কিনে দিয়েছেন। নিজে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে গিয়ে সন্তানকে সাইকেল কিনে দিয়েছেন। নিজের আর্থিক কষ্টের সময় নিজে ছোট হয়ে অপরের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সন্তানকে পড়ার খরচ পাঠিয়েছেন।

সময়মতো দেনা শোধ করতে না পারায় নিজে গাল-মন্দ শুনেছেন। শত আর্থিক কষ্ট থাকা সত্ত্বেও সন্তানের আবদার মিটিয়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাধার খাটুনি খেটেছেন হাসি হাসি মুখ নিয়ে শুধুমাত্র ঐ সন্তানের সুখের কথা ভেবে।

তাই ঐ ছেলেটির মতো চিৎকার করে দুনিয়ার সকল মানুষকে আমিও জানিয়ে দিতে চাই,

‘আমার বাবা না থাকলে আজ আমি যা হয়েছি তার কিছুই হতে পারতাম না।’

আর সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, মনের ভুলেও যেন আমি আমার বাবার কাছে একজন অকৃতজ্ঞ সন্তান না হয়ে উঠি। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাকে সেই আশীর্বাদটুকু প্রদান করেন। আমার বাবা আমার জন্য যেটুকু করেছেন, তার কনামাত্র ঋণ শোধ করার দুঃসাধ্য আমার নেই। মানুষটি আমার কাছ থেকে কোনো কষ্ট না পেলেই আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান একজন সন্তান মনে করবো। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।