- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

বাজেট ঘাটতি দুই লাখ কোটি টাকা

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। ফলে আইএমএফের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, এবার বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশে আটকে রাখতে ব্যর্থ হবে সরকার। এবার বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর এই ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছর সরকার ব্যাংক খাত থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ করার পরিকল্পনা করছে। অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে ধরা হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। আর আগামী বছর ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ৮৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেওয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার।

অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। চলতি বছর সরকার ১১ মাসে ব্যাংক ঋণ নিয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। অথচ চলতি বাজেটে ঋণ নেওয়ার টার্গেট ছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান সংকট নিরসনের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ থাকতে হবে। আগামী অর্থবছর বাজেটে ঘাটতি ঠিক রাখাই হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি হলে সমস্যা নেই। প্রতি বছর প্রবৃদ্ধির ৫ শতাংশ ধরেই ঘাটতি বাজেট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ বছর অনুদান ছাড়া ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। তাতে সমস্যা নেই। আরও বেশি হতে পারত। তবে পরবর্তী সময়ে রাজস্ব আহরণের ওপর জোর দিতে হবে।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী বছর কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয়ের দিক থেকে আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সানেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯ স্বাভাবিক না হলে রাজস্ব আহরণের জন্য দুর্দিন। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। করদাতাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্থবছর শেষে দেখা যাবে ব্যাংকগুলো ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। কারণ তাদের মুনাফা কমে যাবে। ঋণের সুদের হার ও ইনস্টলমেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বড় করদাতা ইউনিট (ভ্যাট ও ট্যাক্স) মোট রাজস্বের ৬০-৭০ শতাংশ আহরণ করে। কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য না থাকায় তা আদায় করা সম্ভব হবে না। এদিকে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়ে ধরে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশে আটকে রাখা হতো। কিন্তু করোনার আঘাতে এবার তা ছাড়িয়ে যাবে। আগামী ১১ জুন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৫ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ফলে বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আর অনুদান ব্যতীত বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন