অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। সরকার দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্যরে মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলে এলেও প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আমিনবাজারে তৈরি হতে যাচ্ছে একটি বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ জন্য সরকার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে সংগৃহীত কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকার যে শুধু বিদ্যুৎ পাবে তা-ই নয়, এর ফলে পরিবেশদূষণও অনেকাংশে কমে আসবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ ৩০ একর জমি দিচ্ছে। আর চীনা সংস্থা চাইনিজ মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিএমইসি) এই প্রকল্পে শতভাগ অর্থ বিনিয়োগ করবে। বিদ্যুৎ বিভাগ তথা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এই বিদ্যুৎ ক্রয় করবে। জানা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের মাধ্যমে চীনা কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। তবে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ জন্য আলোচনা চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রযুক্তিগত ও আর্থিকভাবে টেকসই হওয়ায় মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিএমইসিকে এই প্রকল্পের জন্য বেছে নিয়েছে। ডিএসসিসির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। একইভাবে গাজীপুরেও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকাতেও একই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা চলছে। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরও একটি প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে টেন্ডারের মাধ্যমে একটি সংস্থা নির্বাচন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন প্রকল্পের জন্য জমি সরবরাহ করছে। এখানে ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে বলে জানা গেছে। যেহেতু নারায়ণগঞ্জের বর্জ্যরে পরিমাণ ঢাকায় উৎপাদিত বর্জ্যরে তুলনায় কম, এ জন্য এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায়ও কম। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও জানান, আগামী দুই বছরের মধ্যে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। তিনি বলেন, এ জন্য আমিনবাজার ৩৬ এবং নারায়ণগঞ্জে ৬ মেগাওয়াট প্লান্ট স্থাপন করা হবে। ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটি পাস হয়েছে। আমিনবাজারে সিটি করপোরেশন যে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করছে, এর মধ্যে ৩০ একর জমি আমরা বরাদ্দ দিচ্ছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও চীনের সিএমইসি কোম্পানির সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং সিটি করপোরেশনের মধ্যে এ জন্য দায়িত্ব তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে আমরা দুটি বিষয়ে অঙ্গীকার করেছি। এর একটি হলো, আমরা ২৫ বছর ব্যবহারের জন্য ৩০ একর জমি দেব এবং আমাদের বর্জ্য দেব। উত্তর সিটি করপোরেশনে গড়ে দৈনিক আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মাধ্যমে আমাদের কিছু উপকার হবে। খোলা স্থানে আবর্জনা রাখায় পরিবেশদূষণ হচ্ছে। কিন্তু এগুলো পুড়িয়ে ফেলা হলে দূষণ যেমন কমবে, একইভাবে ময়লা রাখার ফলে যে জায়গা লাগে তাও কমে আসবে।’ সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন