- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন সশস্ত্র বাহিনী গড়তে চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই। কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। আবার যদি কেউ আমাদের ওপর হামলা করে তা যেন আমরা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারি। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে নৌবাহিনীর জন্য কেনা নতুন যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘সংগ্রাম’ এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশের জলসীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে সংযোজিত হলো নতুন করভেট ক্লাস যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘সংগ্রাম’। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, নতুন যুদ্ধজাহাজ ‘সংগ্রাম’ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন লেবানন যাবে আগামী ৯ জুলাই। এটি বর্তমানে লেবাননে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সমুদ্রসীমা ও সম্পদ রক্ষায় শক্তিশালী নৌবাহিনীর ভূমিকা উল্লেখ করে বলেন, সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য আমাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে আমরা অনেক আধুনিক সরঞ্জাম কিনেছি। তিনি বলেন, আমাদের একদিকে মিয়ানমার আর একদিকে ভারত। দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আমরা আমাদের সমুদ্র্রসীমা অর্জন করেছি। এই বিশাল সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানো, অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করব- সেগুলো আমাদের জানতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার ১৯৭৪ সালের করা প্রতিরক্ষা নীতিমালার ভিত্তিতে ফোর্সে গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। তারই ভিত্তিতে প্রত্যেকটা বাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতিমধ্যে নৌবাহিনীতে সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে। এভিয়েশন সিস্টেম যুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক। মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধেও নৌবাহিনীর সদস্যরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। অপারেশন জ্যাকপটে অনেকে জীবনও দিয়েছেন। এত সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে, ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, যা এখন চিন্তাও করা যায় না। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেন আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন হয়। জাহাজ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে দিয়ে দেই। পাশাপাশি ড্রাই ডক নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের দুইটা ড্রাই ডকই আমরা নৌবাহিনীকে দিয়ে দিয়েছি। আমরা নিজেদের দেশে স্বল্প পরিসরে জাহাজ বানানো শুরু করেছি, মেরামতের কাজও আমরা করছি। বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে যৌথভাবে যেখানে যা প্রয়োজন আমরা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের নিজেদের শিখতে হবে, প্রস্তুত হতে হবে, জানতে হবে। প্রযুক্তি জানতে হবে। আগামীতে জাহাজগুলো আমরা যাতে নিজেরা তৈরি করতে পারি, প্রয়োজনে রপ্তানি করতে পারি সেই চিন্তাটাও মাথায় থাকতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এর মাধ্যমে আজ চিটাগাং না গিয়েও এই কমিশনিংয়ে অংশ নিতে পারলাম। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি বলেই সম্ভব হয়েছে। তারপরও বলব, এটাতে আসলে মন ভরে না। নিজে উপস্থিত থাকার আলাদা একটা আনন্দ আছে। করোনাভাইরাসের সময় নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশাআল্লাহ এই ভাইরাস থেকে বাংলাদেশ এক দিন মুক্তি পাবে। সারা বিশ্ব মুক্তি পাবে। আবার মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। নৌবাহিনীর যাত্রা অব্যাহত থাকুক। এর আগে চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে জাহাজের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এফ এম আরিফুর রহমান ভূঁইয়ার হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধজাহাজটি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল। আইএসপিআর জানায়, কমিশনিং শেষে জাহাজটি আগামী ৯ জুলাই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে লেবাননের উদ্দেশে যাত্রা করবে। লেবাননে ভূ-মধ্যসাগরে বহুজাতিক মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের (এমটিএফ) সদস্য হিসেবে উপমহাদেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিশ্ব শান্তির দূত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত রয়েছে। নতুন এ যুদ্ধজাহাজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সমুদ্রসীমা পেরিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ করেন সংশ্লিষ্টরা। নৌবাহিনীতে সদ্য সংযোজিত ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ মিটার প্রস্থের এই জাহাজটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম। জাহাজটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে ও ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, রাডার জ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত। এ ছাড়া জাহাজটিতে হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়নের সুবিধাদি রয়েছে। কমিশনিং অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৭ এপ্রিল জাহাজটি চীনের সাংহাই বন্দর হতে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন