- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

প্রবাসীরা সংকটে, তবু বৈধ পথে বাড়ছে রেমিট্যান্স

সারা বিশ্বে মহামারী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও সংকটে রয়েছেন। এরপরও দেশে থাকা স্বজনদের কথা ভেবে তারা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন রেকর্ড পরিমাণ। ফলে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রদানকারী প্রবাসীদের নগদ দুই শতাংশ প্রণোদনা, হুন্ডি নিরুসাহিতকরণসহ নানামুখী পদক্ষেপের কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। শুধু তা-ই নয়, রেমিট্যান্সের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ১৭ জুন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার যা ৩ জুন পর্যন্ত ছিল ৩৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই রেকর্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। তবে হুন্ডি চক্রকে ভাঙতে পারলে এ প্রবাহ আরও বাড়বে। কেননা হুন্ডির একাধিক চক্র দেশে-বিদেশে বসে প্রবাসীদের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠান। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে হুন্ডির ফাঁদে পড়ে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এজন্য নগদ দুই শতাংশ প্রণোদনার বিষয়টি সম্পর্কে প্রবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে গত বছরের শেষ দিকে নগদ ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। এই ঘোষণার পরপরই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর শুরুতে রেমিট্যান্সে ধস নামলে গত ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ৩ জুন পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্র্রার রিজার্ভ ছিল ৩৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ১৭ জুনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারে। সেই হিসাবে ১৪ দিনে ৩৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে অন্তত ছয় মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে দেশে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল ২০১৭ সালে, যা ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের একই তারিখ, অর্থাৎ ১৭ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স অর্জন করেছে। এ সময়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ১৬.৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সরকারের দুই শতাংশ প্রণোদনা প্রকল্পের সুফল হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স আসে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর চলতি বছর ১৭ জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ দশমিক ৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এমন সংকটকালেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে এটা নিঃসন্দেহে সুখকর বিষয়। কিন্তু যেসব প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন, করোনা-পরবর্তী তাদের কর্মস্থলে ফেরত পাঠাতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বৈদেশিক শ্রম-বাজার পুনরুদ্ধার ও নতুন বাজার অনুসন্ধানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন