- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

প্রথম দুই মাসে ১০ হাজার, তৃতীয় মাসে ৫০ হাজার শনাক্ত

দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দুই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। কিন্তু শেষ এক মাসে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৫০ হাজারের বেশি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়। এর প্রায় দুই মাস পর গত ৪ মে করোনা রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারে পৌঁছায়। শেষ এক মাসে এই রোগীর সংখ্যা ৫৫ হাজারের বেশি বেড়েছে। প্রথম শনাক্তের পর তিন মাস পর এসে গতকাল মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সব দিক থেকেই ঊর্ধ্বমুখী। নমুনা পরীক্ষা যেমন বাড়ছে, তেমনি শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্যত সাধারণ ছুটি কার্যকর না হওয়া, চলাচল নিয়ন্ত্রণ, পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া, ঈদের সময় বাড়ি যেতে দেওয়া, কমিউনিটি থেকে রোগী শনাক্ত না করা, মাস্ক না পরা, সামাজিক দূরত্ব না মানা এবং দ্রুত রোগী শনাক্ত না করতে পারার কারণে এটা হচ্ছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় আনা, ঢাকা থেকে ফেরত যাওয়া, ঈদ উপলক্ষে শপিং মল খুলে দেওয়ায় এখন এই বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে। গত ৮ মার্চ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসি আরের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে তিনজন করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ, অন্যজন নারী। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই তিন ব্যক্তির মধ্যে ইতালি থেকে দেশে ফেরা দুজন। ইতালি থেকে আসা দুজন ভিন্ন পরিবারের সদস্য। তাদের একজন বাসায় আসার পর তার মাধ্যমে একজন নারীও আক্রান্ত হয়েছেন। ৮ মার্চের পর ৫৮তম দিনে অর্র্থাৎ গত ৪ মে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। ওইদিন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৩ জন। ২০ হাজার ছাড়িয়েছে ৬৯তম দিনে ১৫ মে। সেদিন পর্যন্ত শনাক্ত হয় ২০ হাজার ৬৫ জন। ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে ৭৬তম দিনে ২২ মে। সেদিন শনাক্ত হয় ৩০ হাজার ২০৫ জন। ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে ৮২তম দিনে ২৮ মে। সেদিন শনাক্ত হয় ৪০ হাজার ৩২১ জন। ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে ৮৭তম দিনে ১ জুন। সেদিন পর্যন্ত শনাক্ত ছিল ৫২ হাজার ২৪৫ জন। ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে ৯০তম দিনে ৫ জুন। এদিন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৬০ হাজার ৩৯১ জন। আইইডিসিআরের তথ্যানুসারে, এখন প্রতি সপ্তাহে হুঁ হুঁ করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত সাত দিনে শনাক্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৬১৬ জন। এর আগের সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৫৪৫ জন। তার আগের সপ্তাহে ১১ হাজার ৩৪২ জন। করোনাবিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শুরুর দিকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কম ছিল, কিন্তু এখন সেটা বেড়েছে। এ ছাড়া সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়া, সঠিকভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন-আইসোলেশন না মানা, কয়েক দফায় পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় আনা-নেওয়া, সাধারণ ছুটি না মানার কারণে তাই রোগী সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। দেশের সব রোগীকে পরীক্ষা করা হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গ্রামের কেউ তো এখনো টেস্টের আওতায় আসছে না। সেটা যদি করা যেত তাহলে রোগী সংখ্যা আরও বাড়ত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রতিদিন যে চিত্র আমাদের বলা হয় সেটা প্রকৃত চিত্র নয়, আমরা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারছি না। আর যদি প্রতিরোধ না করা যায় তাহলে প্রতিদিন হয়তো ২০০ থেকে ৪০০ মানুষ মারা যাবে। লকডাউন উঠে গেল, আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে না, দ্রুত রোগী শনাক্ত হচ্ছে না। এতে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ সহজে কমবে না। একই সঙ্গে যদি অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়, তাদের হাসপাতালে ভর্তির দরকার হলে তখন কী হবে সেটাই চিন্তার বিষয়।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, টেস্ট বেশি বা কম হোক, সংক্রমণ বাড়তে থাকবে এখন। এখনো যাদের লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে কেবল তাদের এবং তাদের সংস্পর্শে আসাদেরই পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার কত শতাংশ পজিটিভ সেটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সে হারের সংখ্যা বাড়ছে। প্রাকৃতিকভাবে এই রোগ বাড়ে-কমে না। যত বেশি সংক্রমিত ব্যক্তি অন্যদের সংস্পর্শে আসবে ততই এই রোগ ছড়াবে। তাই লকডাউন-আইসোলেশন না মানা, সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়ায় ভবিষ্যতে আমরা আরও খারাপ অবস্থাতে যাব। এখন থেকে রোগী লাফ দিয়ে বাড়তেই থাকবে। এ ছাড়া ল্যাবরেটরি পরীক্ষা যত শনাক্ত হচ্ছেন তার বাইরেও অসংখ্য মৃদৃ লক্ষণযুক্ত রোগী রয়েছে।