সিলেট ব্যুরো: সিলেট শহর থেকে সড়কপথে তামাবিল স্থল শুল্কবন্দরের দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার। দুই লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে যে খরচ ধরা হয়েছে, তা সমজাতীয় বেশ কয়েকটি চার লেন সড়কের তুলনায় অস্বাভাবিক।

সিলেট থেকে সীমান্তবর্তী এলাকা তামাবিল পর্যন্ত চার লেনের সড়কটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৬৪ কোটি টাকা, যা সমজাতীয় চার লেন সড়ক নির্মাণের খরচের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ বেশি।

তিন হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি গত ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশিয়ান অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ দিচ্ছে দুই হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।

বাকি ৬১৬ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সিলেট থেকে তামাবিল পর্যন্ত বিদ্যমান দুই লেনের সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে যে টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, তা করা হয়েছে কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সাধারণত উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে কোনো চার লেন সড়ক প্রকল্পে কিলোমিটার প্রতি খরচ হয় ১৮ থেকে ৩৪ কোটি টাকা। যদিও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চার লেনের একটি মহাসড়কে কিলোমিটার প্রতি খরচ হওয়ার কথা ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এ ধরনের সড়ক নির্মাণের খরচ যে বেশি, তা এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বুয়েটের গবেষণায় উঠে এসেছে। বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা সমালোচনার পরও চার লেনের সড়কে কিলোমিটার প্রতি খরচ কিছুতেই কমছে না। নানা অজুহাতে খরচ বাড়ানো হচ্ছে; যার সব শেষ উদাহরণ সিলেট থেকে তামাবিল মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি।

এর আগে ১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার খরচ পড়েছে কিলোমিটার প্রতি ২১ কোটি টাকা। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেন প্রকল্পে খরচ হয়েছে ২২ কোটি টাকা। রংপুর থেকে হাটিকুমরুল চার লেনে খরচ পড়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট প্রস্তাবিত চার লেনের সড়কটির কিলোমিটার প্রতি খরচ ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওপারে ভারতের মেঘালয় থেকে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য তামাবিল বন্দর দিয়ে আনা-নেওয়া করায় সিলেট-তামাবিল সড়কটি ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারত, ভুটান, মিয়ানমার ও চীনের উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রেও এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রী ও মালপত্র দ্রুত পরিবহন করতে সরকার সিলেট-তামাবিল বিদ্যমান দুই লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই প্রকল্পে মোট তিন হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার মধ্যে পরামর্শক ব্যয়, যানবাহন কেনা, সম্মানী, টেলিফোন, জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতে ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এই ১০০ কোটি টাকা বাদ দিয়ে তিন হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা খরচ হবে চার লেনের সড়ক নির্মাণে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৯৩৯ মিটারের তিনটি সেতু নির্মিত হবে, যাতে খরচ হবে ৪৮৭ কোটি টাকা। ৫৬ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ২৯৮ কোটি টাকা। আর্থওয়ার্ক নির্মাণে খরচ হবে ৪১৭ কোটি টাকা। ৬২৫ মিটার কালভার্ট নির্মাণে খরচ হবে ৬৩ কোটি টাকা। যাত্রীদের জন্য শেড নির্মাণে খরচ হবে ১১৬ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে খরচ হবে ৭৬৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া টোল প্লাজা নির্মাণ ও এক্সেল লোড স্টেশন নির্মাণে খরচ হবে ২০ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, সড়ক ও সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে মোট খরচ হবে তিন হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি খরচ হচ্ছে ৬২ কোটি টাকা। আর মোট খরচ হিসাব করলে কিলোমিটার প্রতি ৬৪ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।