- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

পরিবার চালাতে বাবার সঙ্গে রিকশা চালায় দশম শ্রেণির হানিফ

মহসিন খান: করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ সহ পুরোবিশ্ব। থমকে গেছে বৈশ্বিক অর্থনীতি,শিক্ষা ব্যবস্থা সহ সবকিছু। স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে ঘরবন্দি জীবন কাটছে তাদের। এসময়ে কেউ হয়তো জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কার্যকলাপে, কেউ আবার হয়ে ওঠছে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গাইবান্ধা জেলার শাকহাটা থানার আবু হানিফ। রিকশা চালিয়ে করোনা কালীন জীবিকা নির্বাহ করছে সে।

আবু হানিফ এবার ক্লাস টেনে পড়ে। তার পরিবারে রয়েছে মোট পাচঁজন সদস্য। বাবা ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় রিকশা চালান। তার স্কুল বন্ধ হলেই বাবাকে সহযোগিতা করতে চলে আসেন ঢাকায়। তুলে নেন রিকশার হ্যান্ডেল। বর্তমানে করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকায় ঢাকায় বাবার সঙ্গে রিকশা চালিয়ে অসচ্ছল পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করছে সে।

আবু হানিফের সঙ্গে কথা হলে সে বলে, স্যার আমাদের এক সময় অনেক সহায়-সম্পত্তি ছিলো। আমাদের ছিলো সুখের সংসার। কিন্তু আমাদের ফুফুরা আমাদের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করেছেন। আমাদেরকে আমাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই আমার স্কুল বন্ধ পেলে বাবার সঙ্গে রিকশা চালাই।

আবু হানিফ আরো জানায়, তার বাবা এবং সে সকালে দুটি রিকশা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। রাতে থাকে রিকাশার গ্যারেজে। সারাদিন রিকশা চালানোর পর রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সেখানেই সে পড়তে বসে। যতোক্ষণ শরীরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে ততোক্ষণই অধ্যায়ন করে সে। এরপর ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল হতে না হতেই আরেকটি নতুন দিনে, আরেকটি নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে, বড় হওয়ার প্রত্যয়ে জীবন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।

এতো কষ্টের মধ্যেও পড়ার কারণ কী? জানতে চাইলে তার সরল উক্তি, পড়াশোনা ছাড়া কি ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব? ভাগ্য পরিবর্তন করতে এবং জাতি গঠন করতে পড়াশোনা বা জ্ঞানে বিকল্প নেই। তাই সে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়, দেশের সেবা করতে চায়।

ও আরো জানায়, স্যার আমি এখন ক্লাস টেনে পড়ি। বর্তমানে পড়াশোনা করার জন্য আমার কোনো বইপুস্তক নেই। আমার পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে। আমি বড় হয়ে দেশের সেবা করতে চাই। আমার পড়াশোনার করার যদি একটু ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

আবু হানিফের পিতা আব্দুল লতিফের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমার ছেলে অনেক ভদ্র এবং শান্ত। আমি ওকে দিয়ে কাজ করাতে চাইনি। কিন্তু কী করবো বলেন? এলাকার রাখতে ভরসা পাই না। কারণ এলাকার ছেলেগুলো করোনার সময়ে অনেক অপরাধমূলক কাজে জাড়িয়ে পড়ছে। মাদক আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। এর থেকে রক্ষা করতেই মূলত ছেলেকে নিজের কাছে রাখা। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে আমি আমার ছেলেকে ভালো করে পড়াতে চাই, ওকে মানুষের মতো মানুষ বানাতে চাই। আমার তো আর তো সম্পত্তি নেই! তাই ছেলের এখন আমাদের সম্পদ।