- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

নিউইয়র্কে করোনায় মৃত্যুর তালিকায় নেই অনেক প্রবাসীর নাম

করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের চিকিৎসা-ব্যবস্থার বেহাল দশার নগ্ন প্রকাশ ঘটেছে। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে এই সিটিতে বহু মানুষ গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন। একটি হাসপাতালেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এ জন্য অনেক রোগী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়েটিং রুমেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। আর যারা আইসিইউতে ঠাঁই পেয়েছিলেন, তাদের সিংহভাগই ভেন্টিলেশনের অভাবে মারা গেছেন। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা হলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতার কাছে সবাই ছিলেন অসহায়। সে সময় দৈনিক ৮০০ জনের মতো মারা গেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানালেও বাস্তবে সে সংখ্যা আরও বেশি ছিল। কারণ, অনেকেই হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ পাননি। নিজ বাসায় যাদের মৃত্যু হয়েছে- এ তথ্য সিটি প্রশাসনে নেই। এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও যারা মারা গেছেন তাদেরও বড় একটি অংশ করোনায় মৃতদের তালিকায় উঠেনি। নিউইয়র্ক সিটি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ১১ জুলাই এ সংবাদদাতাকে জানান, মোট ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৮২ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। এর মধ্যে করোনায় মারা গেছে ১৮ হাজার ৬৬৭ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের নথিতে একই সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আরও ৪৬১১ জনের নাম রয়েছে করোনা-উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীর তালিকায়। অর্থাৎ এরা যে করোনায় মারা গেছেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি চিকিৎসকরা। এভাবেই মৃত্যু নিয়েও এক ধরনের উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে। আর এমন তালিকায় যারা রয়েছে তাদের সিংহভাগই অভিবাসী অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। এপ্রিলের শুরুতেই আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃতদের তালিকা নিয়ে কর্তৃপক্ষের নজিরবিহীন উদাসীনতা ও রহস্যজনক আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন, স্কলারশিপ অ্যান্ড ট্রেনিং’-স্যাফেস্ট নামক একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মাজেদা এ উদ্দিন। সে প্রতিবাদের ভাষা এখন আরও জোরালো হয়েছে অন্য কমিউনিটি থেকেও। কারণ, হিসাবের বাইরে থাকা মানুষ হলো কৃষ্ণাঙ্গ অথবা বাদামি রংয়ের। স্প্যানিশ সম্প্রদায়ও উপেক্ষিত হয়েছে নানাভাবে। গত মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসের মাঝামাঝি সময়টি ছিল নিউইয়র্ক সিটির মানুষের জন্য খুবই সংকটের। গোরস্তানে দাফনের সিরিয়াল পাওয়া যেত না। দৈনিক ৮ শতাধিক মৃত্যু হয়েছে করোনায়। মহামারীর চূড়ান্ত এই ছোবলের সময় সবাই যখন ভীত-সন্ত্রস্ত, গভীর এক হতাশায় জর্জরিত, তেমনি সময়ে আক্রান্তদের পাশে ছিলেন মধ্যবয়সী এই সমাজকর্মী মাজেদা এ উদ্দিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আত্মীয়-স্বজনহীন আক্রান্তদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। স্যাফেস্টের প্রতিষ্ঠাতা মাজেদা উদ্দিন এ সংবাদদাতাকে বলেন, মে মাস পর্যন্ত হাসপাতালে সিট পাওয়া কঠিন ছিল। এই সিটির চিকিৎসা-ব্যবস্থাসহ মানবিকতা নিয়ে আমার মধ্যে যে অহংবোধ ছিল, তা ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে করোনাকালে। চোখের সামনে প্রবাসীদের অনেককেই এলমহার্স্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়েটিং রুমে ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছি। কোনোমতে হাসপাতালে ভর্তি করা গেলেও অক্সিজেন/ ভেন্টিলেশনের অভাবে প্রাণ ঝরেছে অনেকের। এর ফলে করোনায় মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য দফতরের নথিতে অনেক প্রবাসীর নাম এখন পর্যন্ত উঠেনি। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন