- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

দেশে সকল প্রকার বৈষম্যের কবর রচনা করা হবে: ডা. শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: মসজিদে যদি পাহারার প্রয়োজন না হয়, তাহলে হিন্দু ভাইদের মন্দিরে পাহারার প্রয়োজন হবে কেন। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ বিপ্লব, এই পরিবর্তন এবং এই আন্দোলনের সফলতা একে অবশ্যই আমরা পাহারাদারি করবো। এ দেশে সকল প্রকার বৈষম্যের কবর রচনা করা হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট মাঠে জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর উত্তর জেলা শাখা আয়োজিত সমাবেশে ও দেয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ আন্দোলন বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর কিংবা সম্প্রদায়ের নয়। এজন্য আপামর জনগণ রাস্তায় নেমে এসে সফল করেছে। এজন্য নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের লোকেরা শুধু লড়াই করে নাই। জাতি দল ধর্ম নির্বিশেষে আপামর জনতার এই আন্দোলনকে কেউ যদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায় তাহলে আবারও বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ তা রুখে দেবে। আমরা সেই ১৮ কোটি মানুষের সাথে থাকবো। অগ্রভাগে থাকবো আমরা কথা দিচ্ছি। ক্ষমতার মালাই খাওয়া জামায়াতে ইসলামির উদ্দেশ্য নয়। সমাজের গুণগত একটা পরিবর্তন আনাই জামায়াতের উদ্দেশ্য। এমন একটি দেশ এমন একটি জগৎ আমরা চাই যেই দেশে জাতি দল ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষ ‍শান্তিতে বসবাস করবে। এদেশের নাগরিক হিসেবে দেশে এবং প্রবাসে যেখানেই থাকুক গর্বের সাথে বলবে আমি বাংলাদেশি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটা বৈষম্যবিহীন দেশে পরিণত হউক। দুনিয়ার জাতিগুলো আমাদেরকে নিয়ে যেন গর্ব করতে পারে এই রকম মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য একটা জাতি আমরা গঠন করতে চাই। এখানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের কাছে এসেছি ঋণ পরিশোধ করার জন্য। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে যাওয়া উচিত ছিলো। ঘরে-ঘরে গিয়ে তাদের সমবেদনা জানানোর দরকার ছিলো। কিন্তু ছোট একটা মানুষ কিছু ব্যস্ততা রয়েছে, ঢাকায় বিশেষ কাজে আমাকে অংশগ্রহণ করতে হবে। এজন্য আমি সকলের বাসায় যেতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দেন। যারা দয়া করে এখানে এসেছেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এটা ভালোবাসার ফল। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি আল্লাহতালা নিজেই যেন তাদের সকলের পরিবারের একান্ত অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাদের সন্তান সন্ততি যারা আছেন তারা তাদের পরিবারের বীরের মর্যাদাকে বুকে ধারণ করে আগামীতে যেন তারা গর্ব করে বলতে পারে আমাদেরও একজন শহীদ আছে, আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন বলতে পারে আমাদেরও আবু সাঈদ আছে, আমাদেরও রুদ্র আছে, আমাদেরও মুগ্ধ আছে আমাদেরও রিয়া আছে, কান্তা আছে। আমাদের এরকম হাজার হাজার শহীদ আছে। আমরা সেই বীরদের অনুসারী। তারা যেন অনুপ্রাণিত হয়। সত্যের পথে কল্যাণের পথে নিজেকে নিজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা আনন্দিত। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাড়াকাড়ি মারামারি হতো, মানুষ চলাফেরা করতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতো। এখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই ভরসা। এই বন্যার সময় নিজেরা প্রথমে যা পেরেছে তাই দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছে। রুদ্র পিতামাতার একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলো। তাকে ঘিরে বাবা-মার অনেক স্বপ্ন ছিলো। তবে এটা ঠিক রুদ্র বেচে থাকলে একটা ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতো। রাষ্ট্রকে সে কিছু দিতে পারতো। কিন্তু সে চলে গিয়ে যা দিয়ে গেছে এটা রুদ্রের মত আরও একহাজার জনকে একসাথে করলেও তা হবেনা। রুদ্ররা বারবার ফিরে আসে আল্লাহর রহমতে। মানুষ আজ তাদের গর্ব ভরে স্মরণ করবে। আমাদেরও আবু সাঈদ ছিলো, আমাদেরও রুদ্র ছিলো। আমাদেরও মুগ্ধ ছিলো। যারা সন্তান হারিয়েছেন তিনি বুঝেন কলিজাটা কয় টুকরা হয়েছে। ঘুরে ঘুরে সারাদেশে দেখার চেষ্টা করছি। নিহত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। তাদের পরিবারের এই অপূরণীয় ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হবার নয়।

জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর উত্তর জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ মো. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল ও জাগপা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন মোল্লা, জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর দক্ষিণ জেলা আমির মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল হাকিম, পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ইকবাল হোসেন, দিনাজপুর উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোকাররম হোসেন, ওলামা মাশায়েকদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সোহরাব হোসাইন, দিনাজপুর উত্তর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খোদা বকস, দিনাজপুর উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

এর আগে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা হতে দিনাজপুরে পৌঁছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ রুদ্র সেনের পাহাড়পুরস্থ বাসভবনে যান এবং তার পিতা মাতার সাথে দেখা করেন। এছাড়া সমাবেশ স্থলে আগত শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন ও প্রত্যেক শহীদের পরিবারকে নগদ দুই লক্ষ করে টাকা প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দিনাজপুর জেলার ৭ জন শহীদ হন। তারা হলেন-দিনাজপুর জেলা শহরের পাহাড়পুরের বাসিন্দা ও শাবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেন, বিরল বহলা এলাকার বাসিন্দা মাদরাসা শিক্ষার্থী মো. মাসুম রেজা, বিরলের নাগরবাড়ীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আব্দুল কাফি, একই উপজেলার পাকুড়া এলাকার রিকশাচালক জয়নাল আবেদীন, দিনাজপুর সদর উপজেলার রানীগঞ্জ এহিয়া হোসেন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম রাহুল, চিরিরবন্দর উপজেলার লক্ষিপুর বাসুদেবপুর গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী মো. সুমন পাটোয়ারী ও বীরগঞ্জের ডাবরা জিনেশ্বরী গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী মো. সেলিম উদ্দিন।