রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী আনুশকা নুর আমিনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দিহানের কলাবাগান বাসার দারোয়ান দুলালকে আটক করার পর পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে কলাবাগানের ডলফিন রোড থেকে তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে দারোয়ান দুলাল পলাতক থাকলেও পুলিশ বলছে, নজরদারির মধ্যেই ছিলেন তিনি।

ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে আমরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দারোয়ানকে হেফাজতে নিয়েছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে পরে জানানো হবে। এছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দু-এক দিনের মধ্যে দিহানের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

হেফাজতে নেওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল ঘটনার দিনের যে বর্ণনা দিয়েছেন, এর সঙ্গে দিহানের দেওয়া বর্ণনার অনেকটাই মিল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এসি আবুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই নজরদারিতে ছিলেন ওই বাসার দারোয়ান দুলাল। ঘটনার যথার্থতা যাচাইয়ে তার প্রয়োজন বোধ করায় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে দিহানের দেওয়া বর্ণনা মিলিয়ে দেখা হবে। যেহেতু দারোয়ান এজাহারভুক্ত আসামি নন, তাই তাকে আটক রাখা হবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে যদি মনে হয় ছেড়ে দেওয়া উচিত, তাহলে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলের আশপাশের পুরো এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। পাশাপাশি দিহানের ওই তিন বন্ধুর মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে ঘটনার সময় তারা কোথায় ছিল সেই লোকেশন বের করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় আমরা ছেড়ে দিয়েছি। তবে তারা নজরদারির বাইরে নয়। প্রয়োজনে তাদের আবার হেফাজতে নেওয়া হবে।’

এদিকে, গ্রেফতার হওয়া দিহানের স্বীকারোক্তি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন নিহতের পরিবার। আনুশকার পরিবার বলছে ঘটনার শুরু থেকেই পুরো সত্য লুকানোর অপচেষ্টা করে আসছে দিহান। তাদের দাবি ‘গ্রুপ টর্চারে’ মারা গেছে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা।

তার পরিবার আরো দাবি করছে যে এ ঘটনায় শুধু দিহান নয়, তার তিন বন্ধুও জড়িত ছিল। এখন আনুশকার পরিবার দিহানের তিন বন্ধুকেও আসামি করতে চায়। যদিও পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এ ঘটনায় তিন বন্ধুর কোন সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আনুশকার মা সোমবার (১১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার সময় দিহানসহ চারজন সেখানে উপস্থিত ছিল। ঘটনা শুনে হাসপাতালে যাওয়ার পর দিহানের কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, চার বন্ধু তার বাসায় ছিল। দিহানকে আগে থেকে চিনতাম না। ওই দিন ফোন করে সে তার পরিচয় দিয়েছিল।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে বন্ধু দিহানের মোবাইল কল পেয়ে বাসা থেকে বের হন রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন। এরপর কিশোরীকে কলাবাগানের ডলফিন গলির নিজের বাসায় নিয়ে যান দিহান। ফাঁকা বাসায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।

অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানসহ চার বন্ধু তাকে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন। ধর্ষণের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় আনুশকার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ঘটনার মামলায় দিহান গ্রেফতার রয়েছেন। তিনি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।