- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

তিস্তাপাড়ে ভাঙন আতঙ্কে মানুষ

করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। বন্যার পানি কমলেও নতুন করে এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ৮০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে থাকায় চর ও দ্বীপচরগুলোয় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। গাইবান্ধার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তলিয়ে গেছে চর ও নিম্নাঞ্চল। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

লালমনিরহাট : করোনাভাইরাস দুর্যোগে নদী ভাঙন আতঙ্ক যুক্ত হয়ে মহাসংকটের শঙ্কায় চিন্তিত লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটছে এদের। এদিকে গত শনিবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও গতকাল সকাল থেকে পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর নদী ভাঙন আর বন্যার সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় সঞ্চয় হাতে রাখলেও এবারে সে সঞ্চয় করোনার লকডাউনে শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আগাম বর্ষা হানা দেওয়ায় আগাম ভাঙনও দেখা দিয়েছে তিস্তার বাঁ তীরে। প্রতিদিন ভাঙনের কবলে পড়ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাগানসহ নানা স্থাপনা। ভাঙনের কবলে পড়ে অপরিপক্ব পাট, বাদাম, ভুট্টাসহ সব ফসল ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন তীরবর্তী কৃষক। কয়েক দিনের ব্যবধানে জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড়, চ-ীমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া এবং সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামের প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি তিস্তাগর্ভে বিলীন হয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে কুটিরপাড়, চ-ীমারী ও চর গোকুন্ডা গ্রাম। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে জেলার তিনটি সলেডি স্পার বাঁধ। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা শাহিন মিয়া, হজরত আলী, সোহরাব হোসেন জানান, কয়েকদিনের অতিবৃষ্টির ফলে তিস্তায় ভাঙন বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে ফসলি জমি, বাঁশঝাড় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এতে আর্থিক ক্ষতির কবলে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। ভাঙন থেমে নেই। নদীতে বাঁধ দেওয়া না হলে অতিদ্রুত চর গোকুন্ডা গ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে। একই গ্রামের বৃদ্ধ মনির রহমান জানান, জীবনে তিনি ২০-২২ বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এখন সড়কের পাশে কয়েকটা টিনের চালায় কোনোরকম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছেন। এবার কোথায় যাবেন? করোনায় ঘরের বাইরে যাওয়া যায় না। সে ঘর নদীতে ভেঙে গেলে থাকবেন কোথায়? সে চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে বৃদ্ধ বদিয়ারের। চর গোকুন্ডা গ্রামের ভাঙনের কবলে পড়া আক্কাস আলী, ফরিদ ও আমেনা বলেন, গত ১০ দিনের ব্যবধানে এ গ্রামের ২৫টি বসতভিটা, কবরস্থান, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। কেউ পাশে জমি ভাড়া নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও অনেকেই রাস্তার ধারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মহিবুল হক বলেন, গত ১০ দিনে তিস্তার ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, করোনার মাঝেও বন্যা আর ভাঙনে দিশাহারা নদীপারের মানুষ। বাঁধগুলো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় এলাকায় পাইলিং দেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রংপুর : ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল কমে আসায় তিস্তায় পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত কয়েকদিনে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ৮০০ পরিবার বন্দী অবস্থায় রয়েছে। ওইসব এলাকার খেতের ফসল তলিয়ে গেছে। গঙ্গাচড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ চরাঞ্চলে প্রায় ৩০০ পরিবার বন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলের খেত, দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর উজানের পানি বৃদ্ধির ফলে গঙ্গাচড়ার সাতটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার ১৫টি চরে বসবাসকারী প্রায় ৩০০ পরিবার বন্দী হয়ে পড়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নে বিনবিনা এলাকায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাকা সড়ক পড়েছে হুমকির মুখে। বিভিন্ন চরে সবজি, ভুট্টা ও বাদাম খেত তলিয়ে গেছে। কাউনিয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে বালাপাড়া, টেপামধুপুর, শহীদবাগ ও নাজিরদহ। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাকারিয়া আলম বলে, সকালে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন