- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাংকিং করছি: ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেছেন, ‘বিশ্বের সব দেশে আর্থিক কর্মকান্ড প্রায় স্থবির। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকিং খাত। উৎপাদন যদি না থাকে ব্যাংকিং হবে কোথায়? তবে আমাদের সামনে এ সংকট থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় কৃষি খাত। কৃষি খাতে উৎপাদন বন্ধ হয়নি। শুরুতে যে পরিস্থিতি ছিল সপ্তাহের ব্যবধানে বিপণনের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি তাও কেটে গেছে। আমরা এখন কৃষি খাতে গুরুত্ব দিয়ে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি।’

করোনা মহামারীতে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের কিছু অমানবিক বিষয় যখন আলোচনায় চলে এলো তখন একজন মানবিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও তার নিজ প্রতিষ্ঠান রূপালী ব্যাংকের কর্মীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে চলেছেন। করোনায় আক্রান্ত প্রত্যেক কর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন, নিচ্ছেন তাদের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর।

হাসপাতালে ভর্তিতে সহায়তা করছেন, এমনকি প্রয়োজনে লকডাউনে থাকা কর্মীর বাসায় খাবারের ব্যবস্থাও করছেন। বিনা সুদে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া এই ব্যাংকার সোনালী ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংকে সর্বোচ্চ মুনাফা এনে দিয়েছিলেন। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে ব্যাংকার হিসেবে রেখেছেন অনন্য নজির। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘কোনো ভবনে যখন আগুন লাগে আমরা ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চিন্তা করি না। আগে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিতে হয়। আমাদের আর্থিক খাতে সেই আগুনের মতো সংকট চলছে। কত ক্ষতি হবে, ক্ষতি হয়েছে- এসব এখন চিন্তা করলে হবে না। আমাদের আপাতত এ সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিন বছর মেয়াদি চিন্তা করে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ধরে রাখতে এখন ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত ব্যাংকিং দিয়ে এখন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের পর বোঝা যাবে আমাদের ক্ষতি কতটা হয়েছে। কী করতে হবে। মুনাফা হবে কিনা সে চিন্তা এখন অপ্রয়োজনীয়। আগেই বলেছি ভবনে আগুন লেগেছে, এখন আগুন নেভানো মূল কাজ। যদি চিন্তা করি কী কী ক্ষতি হয়েছে তা উদ্ধার করতে হবে, তাহলে আগুন নেভানো যাবে না। অর্থাৎ এ সংকট থেকে বের হওয়া যাবে না। তাই ব্যাংক খাতে এখন প্রয়োজন টিকে থাকা। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। রপ্তানি বাণিজ্য সহসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। তাই আমাদের সামনে এখন প্রধান বিকল্প কৃষি খাত। কৃষি খাত আমাদের বাঁচিয়ে দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষি খাতের প্রধান সমস্যা বিপণন। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে কৃষি বিপণনে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। কৃষিপণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা রয়েছে। ফলে কৃষক সঠিক দাম পায় না। এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জের এক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, টাঙ্গাইলের একটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাপস বানিয়ে তরমুজ বিক্রি করেছেন। সরকারও এগিয়ে এসেছে। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনে সেনাবাহিনী, পুলিশ বিভাগে দেওয়া হয়েছে। কৃষকের জন্য এমন উদ্যোগ আমরা নিয়েছি যাতে সরাসরি তারা উপকৃত হন। দুগ্ধ খামারিদের জন্য কম সুদে ঋণ দিচ্ছি। আমাদের স্লোগান তৈরি করেছি “দুধ ফেলো না করোনাকালে/ ঘি বানাও সবাই মিলে”। শুধু ঘি নয়, দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে মিল্ক ভিটার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে খামারিদের ঋণ দিচ্ছি। ব্যুরো বাংলাদেশের মাধ্যমে আদা চাষিদের ঋণ দিচ্ছি। আমরা আদা আমদানিকারকদের ডেকে বলেছি ১০ শতাংশ আদা দেশের বাজার থেকে কিনতে হবে। তাদের অর্থায়ন করব আমরা। প্রতি বছর দেড় লাখ টন আদা উৎপাদন হবে। ঠ্যাঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (এনজিও)-এর মাধ্যমে পিয়াজ চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছি। টমেটো চাষিদের ঋণ দিচ্ছি।’ রূপালী ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘এ মুহূর্তে ব্যাংকিং খাতে বড় ধাক্কা লাগলেও গত তিন মাসে আমাদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু ব্যাংকের কমেছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে। তাই বলা যায়, যে আশঙ্কা সবাই করছে তা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব। আমাদের ইউনিক বৈশিষ্ট্য আছে। যারা বলে কর্মচারীদের বেতন কমাতে হবে সেটাও সঠিক কোনো পদ্ধতি নয়। এখন মুনাফার কথা কোনোভাবেই চিন্তা করার দরকার নেই। যে সংকট, মনে হচ্ছে তা খুব দ্রুত কেটে যাবে।’

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন