- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

ডেনিস কম্পটন একইসঙ্গে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল ও ক্রিকেট দু’টিই । ক্রিকেটে বিরাট কোহলি-স্টিভ স্মিথদের ব্যাটিং দেখতে যেমন ক্রীড়াভক্তরা অপেক্ষা করেন, তেমনই লিওনেল মেসি-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর খ্যাতিও আছে বিশ্বজুড়েই। তবে একইসঙ্গে ফুটবল ও ক্রিকেট কেউ খেলে যেতে পারেন? বর্তমানে এটা অসম্ভব মনে হলেও বহুবছর আগেই এই কীর্তি গড়েছেন এক ইংলিশম্যান। তার নাম ডেনিস কম্পটন।

কালজয়ী এই ক্রীড়াবিদের জন্ম ১৯১৮ সালের ২৩ মে। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ১৯৩৭ সালের ১৪ আগস্ট কম্পটনের অভিষেক হয়। এসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর ৮৩ দিন। দেশটির ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার তিনি।

অভিষেক ইনিংসেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন কম্পটন। কিউইদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুহুর্তে হাল ধরে খেলেছিলেন ৬৫ রানের ইনিংস। বলা যায় তার সেই ইনিংসের কল্যাণেই ম্যাচটি ড্র হয়। নিশ্চিত হারের মুখ থেকে বাঁচে ইংলিশরা। এভাবে ক্যারিয়ারজুড়েই অসংখ্য দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়েছেন ডেনিস কম্পটন। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসেবেই তিনি বিবেচিত হন।

ইংল্যান্ডের হয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মোট ৭৮ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন কম্পটন। রান করেছেন ৫৮০৭, যা সেই সময়ের হিসেবে অসাধারণ বললেও কম হবে। এছাড়া ৫১৫টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ খেলেছেন এই সব্যসাচী ক্রীড়াবিদ। সেখানে ব্যাট হাতে ১২৩টি সেঞ্চুরিতে ৩৮,৯৪২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৬২২ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসের বিরলতম চায়নাম্যান বোলারদের একজন ছিলেন কম্পটন। এছাড়া সে সময়ের সবচেয়ে ক্ষিপ্রগতির ফিল্ডার হিসেবেও তার সুনাম ছিল।

শুধু ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল নয়, জাতীয় ফুটবল দলের হয়েও খেলতে পারতেন কম্পটন। ঘরোয়া ফুটবলে সেসময়ের অন্যতম সেরা ক্লাব আর্সেনালের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন এই ক্রীড়াবিদ। উইঙ্গার পজিশনে খেলা কম্পটন দলটির হয়ে ৫৪ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। গোল করেছেন ১৫ টি। ফুটবলে তিনি ১১ নম্বর জার্সি পড়ে খেলতেন।

কম্পটনের আফসোস হতেই পারে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যান যুদ্ধের আগে ৮ ম্যাচে ৫২ গড়ে ৪৬৮ রান করেছেন যার ভেতর সেঞ্চুরি ছিল দুটি। বিশ্বযুদ্ধ শেষেও ব্যাট হাতে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন তিনি। এসময় ৭০ ম্যাচে ৪৯.৮৯ গড়ে ৫৩৩৯ রান করেন কম্পটন, যেখানে সেঞ্চুরি ছিল ১৫টি। বিশ্বযুদ্ধের কয়েকবছর খেলতে পারলে অনায়াসেই তিনি হয়তো আরো কয়েক হাজার রান করতে পারতেন।

শুধুমাত্র ক্রিকেট ও ফুটবলেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি কম্পটন। ঘোড়ার পিঠে দারুণ এক অশ্বরোহী ছিলেন তিনি। এছাড়া ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছেন এই ক্রিকেটার। বহুমুখী প্রতিভার কারণে হাজার হাজার তরুণী তার জন্য পাগল ছিল।

গ্রেট ব্রিটেনের মিডলসেক্সের হেনডনে জন্মগ্রহন করা এই কালজয়ী ক্রিকেটার মারা যান ১৯৯৭ সালের ২৩ এপ্রিল। তিনি না থাকলেও রয়ে গেছে তার কীর্তি। যতদিন পৃথিবী থাকবে, তার অসাধারণ পারফরম্যান্স নিয়ে বারবার কথা হবে। কম্পটনের মতো একইসঙ্গে ফুটবল ও ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার মতো প্রতিভা তো সহজে পাওয়া যাবে না!