- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

জনসাধারণের অর্থ ব্যয় মিতব্যয়ী হবার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশে আসন্ন শীতে করোনাভাইরাসের নতুন করে আর এক দফা প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে এবং সেই সাথে তিনি জনসাধারণের অর্থ ব্যয় মিতব্যয়ী হবার নির্দেশনা দিয়েছেন।

রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাভার সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিট-সংস্থাকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই নির্দেশনা দেন।

তিনি বলেন, অনেক দেশ যেখানে মারাত্মক অর্থনৈতিক বাধার মুখে পড়ছে, সরকার সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে যা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে খুব কঠিন কাজ ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করার বিষয়ে প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে কারণ করোনাভাইরাস যদি আবারও আঘাত করে তবে আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। আমাদের আবারও জনগণকে সহায়তা করতে হবে; চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে; চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ করতে হবে, অষুধপত্র কিনতে হবে। এসব বিবেচনা করে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত এক পয়সাও আমাদের ব্যয় করা উচিত নয়। ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে আমাদের এই পদক্ষেপ নিতে হবে।

খাদ্য সংকট যাতে দেখা না দেয় সেজন্য খাদ্য উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দেশ খাদ্য সংকটে ভুগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফলস্বরূপ, আমরা সেই সংকটের মুখে পড়ছি না।’

দেশে করোনাভাইরাস রোধে প্রাথমিক পর্যায়ে গৃহীত সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে যাতে আমরা যেকোনো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারি এবং আমাদের তা করতেই হবে।’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী দেশের সম্পদ এবং আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।

তিনি বলেন, ‘কোনো সেনাবাহিনী যদি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় তবে তারা জিততে পারে না। সুতরাং, সকলকে সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে জীবনের গৌরব অর্জন করতে হবে এবং পেশাদার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।’

সকল সেনা সদস্যদের দেশপ্রেম এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে তাদের দায়িত্ব পালন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার একবিংশ শতাব্দীর ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি সময়োপযোগী, আধুনিক, প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত এবং জ্ঞাননির্ভর বাহিনীতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা একুশ শতকের ভূ-রাজনৈতিক এবং সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারদর্শী সেনাবাহিনী গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।’

আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন এবং ২৪ বছর সংগ্রাম করে এই আওয়ামী লীগই জাতির পিতার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই আমরা আমাদের একটা কর্তব্য মনে করি দেশকে উন্নত করা।’

আমাদের সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্রবাহিনীকে ‘স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘তাদের সার্বিক উন্নয়ন করাও আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নবম পদাতিক ডিভিশনের ৮ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও এডহক ১১ বীর মেকানাইজড ব্যাটালিয়ন, ১০ পদাতিক ডিভিশনের ৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও ১৩ বীর, ১১ পদাতিক ডিভিশনের ৫৯ ইষ্ট বেঙ্গল সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও ১২ বীর, ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের ১৫ বীর সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি এন্ড ট্যাকটিকস্ (এসআইএন্ডটি)- সংশ্লিষ্ট কমান্ডারদের কাছে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে ১৯৭৪ সালে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। যে আলোকে আমরা সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করছি, বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল বর্নাঢ্য কুচকাওয়াজ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।