চোখ ওঠাও একটি ছোঁয়াচে রোগ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এই রোগটির জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। সাময়িক কষ্ট হলেও এটি মারাত্মক নয়। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি ধৈর্য ধারণ এবং মহান আল্লাহর কাছে এই সাময়িক কষ্টের প্রতিদান পাওয়ার আশা করা উচিত।

চোখ আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত: মানুষকে আল্লাহ তায়ালা যে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে একটি হলো চোখ। পৃথিবীর অন্য সব নেয়ামত কিংবা আনন্দ-স্বাদ থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে যদি চোখ ঠিক না থাকে। তাই চোখের সঠিক যত্ন নেওয়া উচিত। কারণ, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি নেয়ামতের হিসেব নেবেন। এর সঠিক যত্ন না হলে কঠোর শাস্তি দেবেন।

অবহেলায় পেতে হবে শাস্তি: কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। -(সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)

তাই অন্যান্য নেয়ামতের পাশাপাশি চোখের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। চোখের রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের কতর্ব্য হলো ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ও সওয়াবের প্রত্যাশা করা, তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দেবেন।

চোখের রোগে নবীজির সান্ত্বনা: এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, একবার আমার চোখের রোগ হলো, তখন নবীজি (সা.) আমাকে দেখতে এলেন। তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, জায়েদ, এভাবে যদি তোমার চোখের রোগ অব্যাহত থাকে তবে তুমি কী করবে? আমি বললাম, আমি সবর করব (ধৈর্য ধরা) এবং সাওয়াবের প্রত্যাশা করব।

তিনি বলেন, এভাবে তোমার চক্ষুরোগ যদি অব্যাহত থাকে আর তুমি তাতে সবর করো ও সাওয়াবের প্রত্যাশা করো, তবে তুমি এর বিনিময়ে জান্নাত লাভ করবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৩৪)

নবীজি চোখের যত্ন নিতেন: প্রতিদিন চোখের যত্ন নিতেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে চোখ পরিষ্কার রাখার জন্য তিনি একটি বিশেষ ধরনের সুরমা ব্যবহার করতেন।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ইছমিদ সুরমা ব্যবহার করো। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে ও পরিষ্কার রাখে এবং অধিক ভ্রু উৎপন্ন করে।

ইবনে আব্বাস (রা.) আরও বলেন, মহানবি (সা.)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রত্যেক রাতে (ঘুমানোর আগে) ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন।’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৪১)

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অজু করার সময় পুরো চেহারা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতেন। হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এক কোষ পানি দিয়ে কুলি করেন, নাকে পানি দেন এবং বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে অজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯১)

জান্নাতের সুসংবাদ: অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) বলেন, আমি মহানবি (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা (কিয়ামতের দিন) বলবেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয় বস্তু দুটির পরীক্ষায় (অর্থাৎ, চক্ষুদ্বয়ের পীড়ায় বা অন্ধ হয়ে যাওয়ার মুসিবতে) লিপ্ত করেছি, আর তাতেও সে ধৈর্যধারণ করেছে, বিনিময়ে (আজ) আমি তাকে বেহেশত প্রদান করলাম। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৩৬)

চোখের যত্মে ইমাম শাফেয়ি (র.) নিয়মিত চারটি কাজ করতে বলেছেন।

১. সবসময় কেবলামুখী হয়ে বসার চেষ্টা করা।

২. প্রতিদিনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে উভয় চোখে সুরমা লাগানো।

৩. সবুজ গাছ-গাছালি তথা সবুজ জিনিসের দিকে বেশি বেশি দৃষ্টি দেওয়া।

৪. পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখা।

যদি কোনো ব্যক্তির চোখের সমস্যা দেখা দেয়, তবে নিচের আয়াতটি তিনবার পড়ে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙুলের নখে ফুঁ দিয়ে উভয় চোখের ওপর মাসেহ করবে।

দোয়াটি হলো, ‘ফাকাশাফনা আংকা গিত্বাআকা ফাবাসারুকাল ইয়াওমা হাদিদ।’ (সুরা ক্বাফ : আয়াত ২২)

অর্থ : তোমার সামনে থেকে পর্দা উন্মোচন করেছি; অতএব আজ তোমার দৃষ্টি প্রখর।’