- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

চার স্থানে শ্রমিক বিক্ষোভ অবরোধ

বেতন-ভাতার দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, সাভারের আশুলিয়া ও বরিশালে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। এ সময় রাজধানী এলাকায় সড়ক অবরোধ করার ঘটনাও ঘটে। ফলে এসব স্থানে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আজ বিজিএমইএতে মালিক-শ্রমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল রাজধানীর দক্ষিণখানের চালাবন্দে অবস্থিত শান্তা গার্মেন্টস এবং মিরপুর-১ এ অবস্থিত জেএমএইচ ফ্যাশন, জেএমএইচ ডিজাইন এবং সিনহা নিট-ডেনিম (লিবার্টি) গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় শতশত শ্রমিক রাস্তায় নামেন। বিক্ষোভের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ও মিরপুর সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ তাদেরকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন।

উত্তরায় শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি না মিটিয়েই শান্তা গার্মেন্টস বন্ধ করে দেওয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে শান্তা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আজমপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলেও তারা বিকাল ৪টা পর্যন্ত শান্তা গার্মেন্টসের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
উত্তরায় আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকরা বলেন, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। লেবার আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা যে পাওনাটা পান, তা মালিক এখনো পরিশোধ করেননি। আমরা এ বিষয়ে মালিকের সঙ্গে গার্মেন্টসে বসতে চাই। কিন্তু মালিক আমাদের সঙ্গে দেখা করেনি। তাই আবারও পাওনা টাকা আদায়ের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। পরে তিনি বিজিএমইএতে আমাদের এই বিষয় নিয়ে বসতে চাইলে আমরা আন্দোলন বন্ধ করে দেই। আজ সকালে বিজিএমইএতে আমাদের সঙ্গে মালিকের এই বিষয়ে কথা হবে।

এ ব্যাপারে দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) সারওয়ার আলম খান বলেন, শান্তা গার্মেন্টসে ১৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। এই গার্মেন্টসের মালিক লে-অফ ঘোষণা করেছেন। আর গার্মেন্টস চালাতে পারবেন না বলে বন্ধ ঘোষণা করেছেন। লেবার-ল’ অনুযায়ী শ্রমিকরা যে টাকা পায় তা নিয়ে বর্তমানে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে কথা হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে বিকাল ৪টায় শেষ করে। আজ বিজিএমইএতে মালিক-শ্রমিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। দুপুর থেকে জেএমএইচ ফ্যাশন, জেএমএইচ ডিজাইন এবং সিনহা নিট-ডেনিম (লিবার্টি) গার্মেন্টস নামে ওই গার্মেন্টসগুলোর শ্রমিকরা মিরপুর-১ নম্বর সনি সিনেমা হলের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তারা বিকাল ৫টা পর্যন্ত তারা এ বিক্ষোভ দেখান। আজ আবারও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।

মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) দুলাল হোসেন বলেন, গতকাল দুপুর থেকেই সড়ক অবরোধ করে তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করেছেন। জেএমএইচ ফ্যাশন ও জেএমএইচ ডিজাইন গার্মেন্টস দুটিতে মার্চ মাসের পর থেকে শ্রমিকদের কোনো বেতন হয় না।

এছাড়া সিনহা নিট-ডেনিম (লিবার্টি) গার্মেন্টসের শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে। যারা এখানে এক বছরের কম সময় কাজ করেন। এই শ্রমিকরা ‘লেবার-ল’ অনুযায়ী কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না মালিকের কাছ থেকে। কিন্তু তবুও তারা আন্দোলন করতে সড়কে নেমেছেন।

আশুলিয়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ : সাভার প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ার ও সাভার বিভিন্ন কারখানায় অব্যাহতভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন ও গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট যৌথভাবে। গতকাল বেলা ১১টায় জামগড়া বাসষ্ট্যান্ডের টঙ্গী-বাইপাইল মহাসড়কের পাশে এ মানববন্ধন করেন তারা। এসময় শ্রমিকরা জানান, করোনাকে পুঁজি করে অনেক পোশাক কারখানার মালিক বিনা কারণে অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের ছাঁটাই করছেন। সেই সঙ্গে মালিকরা শ্রমিকদের বেতন ভাতাও পরিশোধ করছেন না। অন্য সব কারখানার মতো আশুলিয়ার রেজা ফ্যাশনস লি. এ তিন শতাধিক, মেডলার এ্যাপারেলস লি. এর ২৪৫ জন, স্টারলিং ক্রিয়েশন-এ দুই শতাধিক, ভিনটেজ গার্মেন্টস-এ ৪০ জন ও শফিপুরের ময়েজউদ্দিন টেক্সটাইলে দুই শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে কোনো পাওনা না দিয়ে। এমনকি রেজা ফ্যাশন ও মেডলার এ্যাপারেলসে প্রায় ৭/৮ শত শ্রমিকদের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে শ্রমিকদেরকে হয়রানিও করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তাই অবিলম্বে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরিতে পুনবর্হাল ও বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে তারা এ মানববন্ধন করছেন।

এ সময় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমই) এর সভাপতি রুবানা হকের শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তারা বলেন, রুবানা হকের ঘোষণার পর থেকেই গার্মেন্টসগুলোতে এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সময় এমন একটি ঘোষণা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে পারে। সেই সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে এই ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত প্রকাশ করিনি। এই সময় এই ঘোষণা অযোক্তিক। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন ,গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র কুমার দাশ, গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া ইসলামসহ আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা ইসমাইল হোসেন, আনিসুর রহমানসহ অনেকেই।

বরিশালে বিক্ষোভ : বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বরিশালের খানসন্স গ্রুপের অলিম্পিক সিমেন্ট কোম্পানির অবৈধ শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ এবং একই গ্রুপের সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অলিম্পিক সিমেন্ট কোম্পানির ছাঁটাইকৃত শ্রমিক ও সোনারগাঁও টেক্সটাইলস শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে গতকাল সকাল ১১টায় নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সোনারগাঁও টেক্সটাইলস শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সংগঠক নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সোনারগাঁও টেক্সটাইলস শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সংগঠক হারুন শরীফ, অলিম্পিক সিমেন্টের শাহ্ আরজুমান ও খাদিজা বেগম এবং জেলা বাসদ আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন ও সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী। সমাবেশে অবৈধ ছাঁটাই বন্ধ ও বন্ধ কারখানা চালুসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানান বক্তারা।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন