- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

গুলশানের স্পা সেন্টার থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মিঠুর আসল পরিচয়

রাজধানীর গুলশানে নাভানা টাওয়ারে ‘হিজামা থেরাপি সেন্টার অ্যান্ড বডি ম্যাসেজ’ নামে একটি স্পা সেন্টারে গত ২২ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে দেহ ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত মোহিদ আলী মিঠু নিজেকে কখনও ইউ, কে, আওয়ামীলীগের সভাপতি, কখনও সাধারণ সম্পাদক দাবি করতেন!

এভাবে বিভিন্ন রথী মহারথীদের সাথে সেলফি ও উচু মহলের সাথে সম্পর্ক করে বিভিন্ন সরকারের মহলে দালালি, তদবির বাণিজ্য ও অল্প বয়সী মেয়েদের ভয় ভীতি দেখিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত করা সহ বিভিন্ন অপকর্মে নিয়োজিত থাকতেন।

সেই অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রাজিয়া খাতুন ওরফে ফারিয়া এবং ম্যানেজার ইমরান খানসহ আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরের দিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ প্রতিষ্ঠানটির মালিক রাজিয়া খাতুন ওরফে ফারিয়া এবং ম্যানেজার ইমরান খানের রিমান্ড মঞ্জুর করে অপর ৮ আসামিকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন— মো. আল আমিন, রাকিবুল হাসান, আল আমিন, মোহিদ আলী মিঠু, হোসনে আরা খাতুন, লিলি, গীতি দেউরী ও জয়া চাম্বু।

এই আসামীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা যাকে নিয়ে তিনি হলেন মোহিদ আলী মিঠু। মামলার ৪ নম্বর এই আসামীর নাম ও ঠিকানা হিসেবে পুলিশ উল্লেখ করেছেন, ‘ নাম: এম মোহিদ আলী মিঠু, পিতা: মো. মমতাজ আলী, মাতা: জরিনা বিবি, রশনা কর্টেজ স্কুল রোড, থানা: ওসমানীনগর, জেলা: সিলেট।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহিদ আলী মিঠু নিজেকে দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও শেফিল্ড শাখা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি হিসেবে দাবি করে আসছেন।

২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারস্থ নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসনে নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন এমপি প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা করেন মোহিদ আলী মিঠু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি কভার ফটো হিসেবে ব্যবহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সাথে তোলা ছবি। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা, এমপি এবং মন্ত্রীর সাথেও তার ছবি রয়েছে। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে তিনি নিজের ছবিসহ পোস্টারও ছাপেন।

জানা গেছে, লন্ডনে kitchen porter হিসাবে কাজ করা মিঠু আওয়ামী লীগের সুরম্য সময়ে অনেক অতিথি পাখির মত ভিড় জমান কেন্দ্রীয় অনেক নেতাদের সাথে! তাদের ভালবাসা ও স্নেহের সুযোগ নিয়ে প্রশাসনকে প্রভাভিত করে স্বার্থ উদ্ধারই ছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য! হিজামা মেসেজ সেন্টার এর কুকীর্তির অনেক আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নারী ঘটিত অনেক বিষয় সামনে আসে. আওয়ামী লীগের নাম বিক্রি করে এরকম অনেক নব্য লীগারদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

২৩ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই রেজাউল আলম ১০ আসামিকে আদালতে হাজির করেন। এর মধ্যে ফারিয়া ও ইমরানের ৫ দিন করে রিমান্ড এবং মোহিদ আলী মিঠুসহ অপর ৮ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, গুলশান থানাধীন নাভানা টাওয়ারে হিজামা থেরাপি সেন্টার অ্যান্ড বডি ম্যাসেজ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উঠতি বয়সের যুবতীদের একত্রিত করে অবৈধ দেহ ব্যবসা পরিচালনা করে যৌন শোষণ ও নিপীড়নমূলক কাজ পরিচালনা করে আসছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে সেখানে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত এবং পতিতাবৃত্তির জন্য প্রস্তুত রাখা অবস্থায় আসামিদের আটক করা হয়। তারা পতিতাবৃত্তির কথা স্বীকার করেছেন। ফারিয়া এবং ইমরান স্পা সেন্টারটিকে মিনি পতিতালয় হিসেবে ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন।

তাই মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, তাদের সাথে অপরাপর কেউ জড়িত আছে কিনা তা যা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফারিয়া ও ইমরানের রিমান্ড আবেদন এবং মোহিদ আলী মিঠুসহ অপর ৮ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

দুই আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। অপর ৮ আসামিরও জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত দুজনের রিমান্ড ও মোহিদ আলী মিঠুসহ আটজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশান-১ এর নাভানা টাওয়ারের লেভেল ২২/এ, ৪৫ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের ১৮/এ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ ও পতিতাবৃত্তির দায়ে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাকে আটক করা হয়।

পরে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মানবপাচার দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।