- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

গণস্বাস্থ্যের কিট কার্যকর নয় জানাল বিএসএমএমইউ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত ‘জিআর কভিড-১৯ ডট ব্লট কিট’ অ্যান্টিবডি চিনতে পারলেও সংক্রমণের প্রথমভাগে করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘কার্যকর নয়’ বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মূল্যায়ন কমিটি। মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। তিনি বলেন, এই কিট উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের রোগ শনাক্তকরণে কার্যকর নয়। উপসর্গের প্রথম দুই সপ্তাহে এই কিট ব্যবহার করে শুধুমাত্র ১১ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীর রোগ শনাক্ত করা সম্ভব।

তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওই কিটের উদ্ভাবক গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান বিজ্ঞানী ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিবেদন সম্পর্কে এখনো তারা বিস্তারিত জানেন না। এটা না দেখে কিছু বলা সম্ভব হবে না। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে তা বিশ্লেষণ করে দেখব কেন কার্যকর নয়? কোন আঙ্গিকে তারা (বিএসএমএমইউ) এটা বলেছে। তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আমরা দেখছি না। আমরা তো আমাদের তৈরি করা কিট চিনি। এই কিটের প্রতি আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। পারফরম্যান্স কমিটি গণস্বাস্থ্যের ৫০৯টি র‌্যাপিড কিট পরীক্ষা করে ওই প্রতিবেদন দিয়েছে জানিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, এই কিট অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে পারলেও আইজিএম (ইমিউনোগ্লোবিন এম, যা ইনফেকশনের শুরুতে তৈরি হয়) এবং আইজিজি (ইমিউনোগ্লোবিন জি, ইনফেকশনের বিলম্বিত পর্যায়ে তৈরি হয়) আলাদাভাবে পার্থক্য করতে পারে না। এর মাধ্যমে ৭০ শতাংশ রোগী, যাদের ইতিপূর্বে কভিড-১৯ হয়েছিল, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব। আর অ্যান্টিবডি টেস্টের ওই তথ্য প্লাজমা বিতরণ, কোয়ারেন্টাইন সমাপ্তির সময় নির্ধারণ এবং লকডাউন উত্তোলনের রূপরেখা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দেন অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, যেসব স্থানে প্রচলিত আরটি-পিসিআর পদ্ধতি চালু নেই, অথবা যাদের কভিড-১৯ উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও আরটি-পিসিআর নেগেটিভ এসেছে, তাদের ক্ষেত্রে এই কিট কিছুটা সহায়ক হতে পারে। এর আগে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য গঠিত এই কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুম গতকাল দুপুরে উপাচার্যের কাছে তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেন। অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, এ কাজের জন্য ঔষধ প্রশাসন এক বছর সময় দিলেও ‘বাস্তবতার নিরিখে’ গবেষণা দল এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে। গবেষণার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও এক সপ্তাহ ব্যয় হয়। তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিউক্যালস ১২ মে প্রথম ২০০ অ্যান্টিবডি কিট পরীক্ষার জন্য দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণা করার কথা থাকলেও ১৯ মে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিউক্যাল রক্তের পরিবর্তে রোগীর লালার নমুনা পরীক্ষার অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে লালা পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস বিএসএমএমইউর গবেষণা দলকে লালার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায়, শুধুমাত্র অ্যান্টিবডি কিটের গবেষণা চালু রাখার অনুরোধ জানায়। তিনি আরও বলেন, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কারণে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন বিলম্বিত হয়। কিন্তু গবেষণা টিম অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করে এক মাসের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম শেষ করেন ও রিপোর্ট তৈরি করেন। তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জি আর কভিড ১৯ রেপিড ডট ব্লট সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘গণস্বাস্থ্যের সঙ্গে বিএসএমএমইউ এর একটি নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) রয়েছে। আমরা এখনো বিএসএমএমইউ থেকে কোনো অফিশিয়াল বিস্তারিত রিপোর্ট পাইনি এবং আমাদের সঙ্গে এনডিএ অনুসারে কোনোরকম আলোচনা করা হয়নি। এটা পেলেই পরবর্তীতে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে আমরা আমাদের মতামত বিএসএমএমইউকে জানাব। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিএসএমএমইউ এর মতামত অনুসারে কিট নিবন্ধন ও বিপণনের বিষয়ে বর্তমানে যা করার ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সিদ্ধান্ত দেবে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন