আশেপাশের সকলেই অবগত তারা স্বামী-স্ত্রী। এ দম্পতির ঘরে যমজসহ বর্তমানে তিন সন্তান রয়েছে। তবে কাগজে-কলমে তারা হয়েছেন ভাই-বোন! এ ঘটনায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেশীদের অভিযোগ, সরকারি চাকরিতে কোটার সুবিধা নেওয়ার জন্যই মূলত স্ত্রীকে বোন বানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের সন্তান আনিসুর রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালবেরহাট গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক। তার ৮ ছেলে-মেয়ে। এরমধ্যে সবার বড় ছেলে আনিসুর রহমান। রংপুর বেতারে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করেন তিনি।

এদিকে সোনালী খাতুন একই জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুরা বাজারের মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে। রবিউল ইসলামের সাত সন্তানের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ২০০৭ সালে সোনালী-আনিসুর দম্পতির বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, বিয়ের পর স্থানীয় সাপখাওয়া দাখিল মাদরাসায় ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন সোনালী। নিজের শ্বশুর-শাশুড়িকে বানান বাবা-মা। এরপর জিপিএ ২ দশমিক ৯৪ পেয়ে ২০১৩ সালে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর পরের বছর সেই সনদ ও ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে ভোটার হন। এতেও শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হককে পিতা ও শাশুড়ি জামিলা বেগমকে নিজের মাতা হিসেবে তথ্য দেন তিনি।

এদিকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জহুরুল হক নিশ্চিত করেছেন সোনালী খাতুন মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক এবং জামিলা বেগমের সন্তান না। তিনি তাদের পুত্রবধূ।

এ ব্যাপারে তিনি জানান, ‘আনিছুর রহমান আমার বাল্যবন্ধু। সোনালী খাতুন তার স্ত্রী। উলিপুর উপজেলায় সোনালীর বাবার বাড়ি।’ মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের আরেক ছেলে খালেক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘সোনালী খাতুন তার ভাবী। মুক্তিযোদ্ধার সুযোগ-সুবিধা পেতেই বড়ভাই-ভাবী এমনটি করেছেন।’

এ ব্যাপারে সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের ৮ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। এই নামে তার পুত্রবধূ আছেন। তিনি আনিছুর রহমানের স্ত্রী।’

এ ব্যাপারে আনিছুর রহমানের জানান, ‘স্ত্রীকে বোন বানানোর বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে। তার স্ত্রী এমনটি করেছেন।’ তবে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান আনিসুরের স্ত্রী সোনালী খাতুন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ‘২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদ করার সময় সোনালী খাতুন এসএসসি সনদ এবং জন্ম নিবন্ধনের তথ্য দিয়ে ভোটার হন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’