সাধারণ সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুবাই-আবুধাবিগামী ফ্লাইটে একজন যাত্রীর ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু এখন এ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে আছে অপ্রতুল ফ্লাইট, অপ্রতুল আসন। ফলে আবুধাবি ও দুবাইগামী যাত্রীদের দুর্ভোগ-ভোগান্তি চরম পর্যায়ে ঠেকেছে। কৃত্রিম সংকটে বিমান টিকিটের দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। তৃতীয় দিনের মতো গতকালও ভিড় ছিল বিমান অফিসে। যাত্রীদের লাইনের ভিড় অফিস পার হয়ে সড়কেও চলে আসে। অভিযোগ আছে, বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভিআইপির নামে টিকিট ব্লক করে রাখেন। এমন সময় সাধারণ যাত্রীদের টিকিট নেই বলে কৃত্রিম সংকট দেখানো হয়। পরে ব্লক করা এসব টিকিটই সাধারণ যাত্রীদের কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, বিমান অফিসে টিকিট পাওয়া না গেলেও বিভিন্নভাবে বাড়তি মূল্যে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার টিকিট কিনতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে আটকে পড়া আমিরাত প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরতে টিকিট কনফার্মের জন্য বিমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অফিসে দুই দিন ধরে ভিড় করছেন। এদের মধ্যে কারও ভিসার মেয়াদ শেষ, কেউ সেই দেশ থেকে ভিসার অ্যাপ্রুভাল এনেছেন, কেউ কেউ এক সপ্তাহের মধ্যে যেতে না পারলে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু পর্যাপ্ত ফ্লাইট না থাকায় সবাই কাক্সিক্ষত টিকিট পাচ্ছেন না। জনশক্তি কার্যালয়ের হিসাব বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে প্রায় এক লাখ অভিবাসী আটকা পড়ে আছেন। আটাব চট্টগ্রাম জোনের সাবেক সচিব এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর বলেন, ‘আবুধাবি-দুবাইগামী যাত্রীদের টিকিট প্রাপ্তিতে এখন চরম নাভিশ্বাস চলছে। টিকিটের কৃত্রিম সংকটের কারণে সুযোগ পেয়েও অনেকে নিজ কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা সার্টিফিকেট পেতে ভোগান্তি। তাই এখন ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করা এবং এজেন্সির মাধ্যমেও টিকিট বিক্রি করা জরুরি।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা যায়, আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত আবুধাবিগামী সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট আছে বিমানের, যার প্রতিটিতে আসন আছে ২৭৮টি করে। কিন্তু ১১ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে দুবাই-আবুধাবিগামী টিকিটপ্রত্যাশী হাজারো যাত্রী। অথচ ইতিমধ্যে আবুধাবিগামী সব ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ফ্লাইটের সংখ্যা না বাড়ালে আর টিকিট দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে। বিমান চট্টগ্রাম অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশের আরও দুটি ফ্লাইটের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

আশা করি এ দুটি ফ্লাইটের অনুমোদন পাওয়া গেলে আর সংকট থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘যাত্রীর প্রত্যাশিত দিনে যদি আসন খালি থাকে, তাহলে অবশ্যই টিকিট কনফার্ম করা হচ্ছে। তবে আসন খালি না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে বর্ধিত মূল্যে বিজনেস ক্লাসে টিকিট কিনছেন। ফলে টিকিট থাকলেই যাত্রীরা পেয়ে যাচ্ছেন।’
জানা যায়, আবুধাবি প্রশাসন জানিয়েছে, আবুধাবিতে অবতরণকারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের রেসিডেন্স ভিসাধারীদের জন্য রেসিডেনশিয়াল আইডেন্টিটি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ অ্যাপ্রুভালের (আরআইসিএ) আর প্রয়োজন হবে না। এ ঘোষণার পর দেশে আটকে থাকা আমিরাত প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছেন। কিন্তু টিকিটের অভাবে তাদের ফিরতে বেগ পেতে হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে টিকিটের জন্য বিমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অফিসে ভিড় করছেন হাজারো প্রবাসী। গতকাল দুপুরে দেখা যায়, টিকিটপ্রত্যাশী অসংখ্য যাত্রী বিমান অফিসে ভিড় করছেন। এ ভিড় অফিস ছাপিয়ে সড়ক পর্যন্ত পৌঁছায়। টিকিটপ্রত্যাশী কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মার্চে এক মাসের ছুটিতে আবুধাবি থেকে দেশে আসি। কিন্তু করোনার কারণে আর ফিরতে পারিনি। চলতি মাসে কর্মস্থলে যোগ দিতে না পারলে হয়তো চাকরিটা হারাতে হবে। কিন্তু গত দুই দিন বিমান অফিসে এসেও টিকিট পাইনি।’ এর আগে ১২ আগস্ট বুধবার সকালে নগরীর ষোলশহরে বিমান বাংলাদেশের অফিসে হাজারো টিকিটপ্রত্যাশী ভিড় করেন। টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীদের অস্বাভাবিক চাপে চট্টগ্রাম নগরীতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। যাত্রীদের হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কির পর অফিসে ভাঙচুর করা হয়। এরা সবাই মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবি যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে এসেছিলেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন