- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

‘কুরবানীর গুরুত্ব, ফযিলত ও বিধি-বিধান’

*কুরবানী শব্দটি মুলত ফারসী বা আরবী “কুরবান” থেকে এসেছে। আর কুরবান শব্দটি “কুরবাতুন” শব্দ থেকে উৎপন্ন। যার অর্থ- নিকটবর্তী হওয়া বা কারো নৈকট্য লাভ করা। ইংরেজিতে sacrifice ত্যাগ বা বিসর্জন অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইসলামী শরীয়াতের পরিভাষায় কুরবানী ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন ও তার ইবাদতের জন্য পশু যবেহ করা হয়। (আল-কামূসুল মুহীত্ব)

ত্যাগ ও আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। এতে অন্য কাউকে অংশীদার করা যাবে না।

*কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। মানবজাতির সূচনালগ্ন থেকেই কুরবানী করার পদ্ধতি বিদ্যমান ছিল। সর্ব প্রথম হযরত আদম (আঃ) এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল উভয়েই কুরবানী করেছিলেন। তাদের মধ্যে হাবিলে কুরবানী আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহন যোগ্য হয়েছিলা। (সুরা মায়েদা-২৭)

আমাদের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) এই কুরবানীর জন্য চরম আত্মত্যাগের নমুনা প্রদর্শন করেছিলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে স্বপ্নযোগে যবেহ করার আদেশ করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইসমাইল (আঃ) কে যবেহ করার আদেশের মাধ্যমে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে এক চরম পরীক্ষা করেছিলেন।

*কোরানে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহীম তাকে বলল : হে আমার বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বলল : পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবে করার জন্য এক মহান জন্তু। (সুরা আস-সাফফাতঃ ১০০-১০৭)

আমাদের প্রিয় হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বিদায় হজ্জ্বের সময় নিজের পক্ষে ৬৩ টি পশু কুরবানী করেছিলেন।

★কুরবানীর গুরুত্বঃ

১। কুরবানী করা মহান আল্লাহর তায়ালার নির্দেশ।

*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর। (সূরা কাউসারঃ ২)

২। সামর্থ্য থাকা সত্যেও যে কুরবানী করে না, রাসূলুল্লাহ সাঃ তার ব্যপারে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন।

*আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (ইবন মাজাহঃ ৩১২৩)

৩। কুরবানী করার ব্যপারে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।

*রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, হে লোক সকল, প্রত্যেক পরিবারের উপর কুরবানী দেয়া অপরিহার্য। (ইবন মাজাহঃ ৩১২৫)

৪। কুরবানীর হুকুম পূর্ববর্তী প্রত্যেক জাতীর জন্য ছিল।

*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি। তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (সূরা হাজ্বঃ ৩৪)

৫। কুরবানী আল্লাহ তায়ালার অন্যতম একটি নিদর্শন।
*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, কুরবানীর উটসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম করেছি। তোমাদের জন্য যাতে কল্যাণ রয়েছে। (সূরা হাজ্বঃ ৩৬)

★কুরবানী যার উপর আবশ্যকঃ

১। হানাফীদের মতে, প্রত্যেক সামর্থ্যবান যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

২। অপর আলেমদের মতে, ঈদের দিনগুলোতে কুরবানীর পশু খরিদ করার মত অর্থ যার কাছে রয়েছে সে কুরবানী আদায় করবে। (তাবয়ীনুল হাক্বাইকঃ ৩/৬, শারহ আর-রিসালাহঃ ) রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস দ্বিতীয় মতটিকে শক্তিশালী করে।

হাদীসের বাণী: যে কুরবানী করার মত আর্থিক স্বচ্ছলতা লাভ করে সে যদি কুরবানী না করে তবে সে যেন আমাদের ইদগাহে না আসে। (ইবনু মাজাহঃ ৩১২৩)

সুতরাং কুরবানীর পশু যবেহ করার স্বচ্ছলতাই এর জন্য অন্যতম শর্ত। কুরবানীর জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া শর্ত নয়।

★কুরবানীর উদ্দেশ্যঃ

১। কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। শুধু মাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য পশু যবেহ করা।

*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হাজ্বঃ ৩৭)

২। কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা কুরবানীর অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।

*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে। (সূরা হাজ্বঃ ৩৭)

★কুরবানীর গোশত যারা খাবেঃ

১। কুরবানীর গোশত অভাবী ও ফকীরদের দিবে এবং নিজেরা খাবে।

*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, কুরবানীর উটসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম করেছি। তোমাদের জন্য যাতে কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থা এগুলোর উপর তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন সেগুলো হতে খাও। আর আহার করাও ধৈর্য্যশীল অভাবী ও ভিক্ষাকারী অভাবগ্রস্তকে। এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হাজ্বঃ ৩৬)

*অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তকে আহার করাও। (সূরা হাজ্বঃ ২৮)

*আলেমগণ উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন- কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে

১। একভাগ নিজেরা খাবে, ২। এক ভাগ দরিদ্রদের দান করবে এবং ৩। এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করবে।

★কুরবানীর গোশত জমা রেখে খাওয়াঃ

কুরবানীর গোশত থেকে অভাবী ও ফকীরদের ভাগ দিয়ে বাকী গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে।

*রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর। (বুখারীঃ ৫৫৬৯)

★কুরবানীর পশু যার নামে যবেহ করবেঃ

১। কুরবানীর পশু যবেহ করা হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে; অন্য করো জন্য নয়।

*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বলুন! আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতি পালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। (সূরা আনআমঃ ১৬২)

২। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু যবেহ করলে আল্লাহ তার উপর অভিসম্পাত করেন।

*রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু যবেহ করে, আল্লাহ তার উপর লানত করেন। (সহীহ মুসলিম)

# আমাদের দেশে একটা নিয়ম হয়ে গেছে- যে আলেম বা ইমাম সাহেব পশুটি যবেহ করার সময় তিনি কুরবানীদাতাকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে, কুরবানী কার নামে করবেন? অথচ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কুরবানী করলে কুরবানী কবুল করা হয় না। তবে ইমাম সাহেবের প্রশ্নটা হওয়া উচিত ছিল, কুরবানী কার পক্ষ থেকে করছেন?

★কুরবানীর পশুর ধরণ:

এমন পশু দ্বারা কুরবানী দিতে হবে, যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এবং দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম’।

*আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি। তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (সূরা হাজ্বঃ ৩৪)

★কুরবানীর পশুর বয়সঃ

শরিয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী।

#উট পাঁচ বছরের হতে হবে।
#গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে।
#ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের।

*জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমরা অবশ্যই মুসিন্না (নির্দিষ্ট বয়সের পশু) কুরবানী করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানী করতে পার। (মুসলিমঃ ১৯৬৩)

★কুরবানীর পশুর কোয়ালিটিঃ

গুণগত দিক থেকে উত্তম হলো- কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হবে। কুরবানীর পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হবে।

*বারা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। আর (দেখলাম) আমার হাত তার হাতের চেয়েও ছোট। তারপর বললেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে না। (অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না) তা হলো-
১। অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,
২। রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট,
৩। পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং
৪। আহত; যার কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে।
নাসায়ির বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে। (তিরমিযিঃ ১৫৪৬, নাসায়ীঃ ৪৩৭১)

★ভাগে কুরবানীর বিধানঃ

উট ও গরু-মহিষে সাত ভাগে কুরবানী দেয়া যায়।
*জাবের ইবনু আবদুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন-
উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী করা বৈধ। (ইব্ন মাজাহঃ ৩১৩২)

#সুতরাং এক থেকে সাত ভাগের যেকোন অংশে কুরবানী করা বৈধ।

★অন্যের পক্ষ হতে কুরবানীঃ

১। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাঃ ও তাঁর সাহাবাগণ নিজেদের পক্ষে থেকে কুরবানী করেছেন। তবে মৃত ব্যক্তিদের পক্ষ হতেও কুরবানী করা জায়েয আছে।

২। জীবিত অন্যের পক্ষ থেকেও কুরবানী করা বৈধ। রাসূলুল্লাহ সাঃ উম্মাতের পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন।
*জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আর তার কাছে একটি দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাঃ নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার। হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে। (আবু দাউদঃ ২৮১০)

★ কুরবানীর পশু নিজে যবেহ করাঃ

১। উত্তম হলো- কুরবানীদাতা ভালোভাবে যবেহ করতে করতে সক্ষম হলে নিজের কুরবানীর পশু নিজেই যবেহ করবে।
*ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন- আবু মুসা আশআরী রাঃ নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কুরবানীর পশু যবেহ করেন। (ফাতহুল বারীঃ ১০/২১)

২। কুরবানীর পশু যবেহ করার ভালো সক্ষমতা নিজের না থাকলে অন্যের মাধ্যমে যবেহ করা জায়েয আছে।
*রাসূলুল্লাহ সাঃ তেষট্টিটি কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করে বাকিগুলো যবেহ করার দায়িত্ব আলী রাঃ কে অর্পণ করেছেন। (মুসলিমঃ ১২১৮)

★পশু যবেহ করার নিয়মঃ

১। কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। যাতে পশু কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর সে জন্য যবেহ করার ছুড়ি ধাড়ালো করে নিবে যেন, যবেহ করতে অধিক সময় দরকার না হয়।

*শাদ্দাদ ইবনু আউস রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে দুটি বিষয় আমি মুখস্থ করেছি। তিনি বলেছেন- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে। আর যখন যবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবে। তোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা যবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়। (মুসলিমঃ ১৯৫৫)

২। যবেহ করার সময় তাকবীর ও বিসমিল্লাহ বলবে।

*জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আর তার কাছে একটি দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাঃ নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার। হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে। (আবু দাউদঃ ২৮১০)

*আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ দুটি শিংওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন। তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন। (সহীহ বুখারী)

৩। যবেহ করার সময় যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দোআ করা উত্তম।

*আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ কুরবানীর দুম্বা যবেহ করার সময় বলতেন, আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন। (মুসলিমঃ ১৯৬৭)

৪। ঈদের সালাত আদায় ও খুতবা শেষ হওয়ার পর পশু যবেহ করা সুন্নাত।

*জুনদুব রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃ কুরবানীর দিন সালাত আদায় করলেন। অতপর খুতবা দিলেন। তারপর পশু যবেহ করলেন। (বুখারীঃ ৯৮৫)

৫। ঈদের নামাজের আগে কুরবানীর পশু যবেহ করলে কুরবানী আদায় হবে না।

*রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আর যে কেউ সালাতের পূর্বে (কুরবানীর পশু) যবেহ করবে, সে তো তার পরিবার বর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল; কুরবানীর কিছু আদায় হলো না। (বুখারীঃ ৯৬৫)

★কুরবানীর চামড়া-গোশত বিক্রির বিধানঃ

কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েয নেই। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয নয়।

*রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আর তা প্রস্তুতকরণে তা থেকে কিছু দেওয়া হবে না। (বুখারীঃ ১৭১৬)

#তবে দান হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা না-জায়েয হবে না। আর চামড়া বিক্রি করে তার টাকা দান করলেও না-জায়েয হবে না।

★কুরবানীর সময়কালঃ

কুরবানীর শেষ সময় হচ্ছে যিলহাজ্ব মাসের ১২ তারিখের সূর্যাস্তের সময় পর্যন্ত। অতএব কুরবানীর পশু যবেহ করার সময় হলো ৩ দিন। কুরবানী ঈদের দিন এবং ঈদের পরবর্তী ২ দিন। অর্থাৎ যিলহজ মাসের ১০, ১১, ও ১২ তারিখ। এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে।

*আল্লাহ তায়ালা ববলেছেন,যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ (যবেহ) করতে পারে। (সূরা হাজ্বঃ ২৮)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী রহঃ উল্লেখ করেছেন, ইবনে আব্বাস রাঃ বলেছেন- এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায়, কুরবানীর দিন ও তার পরবর্তী ২ দিন। (ফাতহুল বারীঃ ৫৬১)

★কুরবানীদাতার জন্য পালনীয় বিধান-নিষেধঃ

১। কুরবানীদাতা ঈদের চাঁদ দেখার পর স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত বিরত থাকবে।

*উম্মে সালামাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী সাঃ বলেছেন, তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহাজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (সহীহ মুসলিম)

২। কুরবানী করার ফলে পরিবেশ দূষিত হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সুতরাং পশুর রক্ত মাটি দ্বারা ঢেকে দেওয়া এবং ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলা একান্ত প্রয়োজন ।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে কুরবানীর মাধ্যমে আপনার নৈকট্য লাভ করার তাওফীক দিন। আমীন

লেখক: আমির হামজা (সায়েম)