- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার সুপারিশ

শুধুমাত্র যুক্তরাজ্য নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে ‘কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’। এছাড়া করোনাভাইরাস পরীক্ষা বিনামূল্যে করার সুপারিশও করেছে কমিটি।

আর এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের পরিবর্তে চারদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর কোভিড-১৯ টেস্ট করে নেগেটিভ হলে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করে কমিটি।

কমিটি মনে করে, কোভিড-১৯ এর সুপ্তিকাল ১৪ দিন, ফলে এই সময়ের মধ্যে বিদেশ ফেরতদের সংক্রমিত হওয়ার এবং তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ২৫তম অনলাইন সভায় এই সুপারিশ করা হয়।

কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিবুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসার আমানুল হক।

কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সভা শেষে সিদ্ধান্তগুলো সুপারিশ আকারে জানায় কমিটি। সুপারিশ অনুযায়ী, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হার কমছে। এই অবস্থায় নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে লক্ষণহীন সংক্রমণ নির্ণয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে পরীক্ষার জন্য বর্তমানে ১০০ টাকা ফি নেওয়া হয়। পরীক্ষা করার জন্য জনসাধারণকে আগ্রহী করার বিবেচনায় পরীক্ষা বিনামূল্যে করার সুপারিশ করা হয়।

অপর এক সুপারিশে বলা হয়, নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্টদের দেশের বিভিন্ন স্থানে পদায়ন করা হলে কোভিড-১৯ রোগীদের যেসব হাসপাতাল চিকিৎসা দিচ্ছে সেখানে শূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রশিক্ষিত জনবল প্রস্তুত না করা পর্যন্ত তাদের পদোন্নতি দিয়ে বর্তমান হাসপাতালগুলো রাখার ব্যাপারে মতামত দেয়া হলো।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘোষিত আর্থিক সহায়তা এখনো পাননি। এজন্য চলমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা দরকার বলে কমিটির আরেক সুপারিশে বলা হয়েছে।

কমিটির বৈঠকে সারা দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্যাকসিন প্রয়োগের রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এ পরিকল্পনায় সন্তোষ প্রকাশ করে এবং ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরুর জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে বলে মতামত দেয় কমিটি। কমিটির মতামত অনুযায়ী:

ক) ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বড় বড় নগরীতে ভ্যাকসিন প্রদান কিছুটা চ্যালেঞ্জিং বিধায় এসব এলাকায় ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করতে সিটি কর্পোরেশনসহ সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

খ) রেজিস্ট্রেশনের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করাতে গণমাধ্যমে প্রচারণা ব্যবস্থা করা দরকার। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে।

গ) ভ্যাকসিন দেয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ঘ) ভ্যাকসিন কার্যকরী হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য এন্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। যথাযথ স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার পর এন্টিবডি দেখা দরকার।

ফার্মাকোভিজিল্যান্সের জন্য প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া কোভিড-১৯ টিকা পরবর্তী বছরগুলোতেও লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরণের নতুন মহামারী সৃষ্টি হতে পারে বলে বৈজ্ঞানিকরা আশঙ্কা করছেন। অন্যান্য প্রচলিত রোগের জন্য শিশু ও বয়স্কদের টিকাদান কর্মসূচি চালু আছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশেই ভ্যাকসিন তৈরি সক্ষমতা গড়ে প্রয়োজন। বেসরকারি উদ্যোগের অনিশ্চয়তা ও দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণকরণ গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করে।