- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

করোনায় মানসিক সংকট চরমে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মানুষের মধ্যে ‘সাইকোলজিক্যাল ডিজরাপশন’ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে মানুষের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়, কাছের মানুষের সংক্রমণের আশঙ্কা, মৃত্যুশঙ্কা, জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগী, ঘরবন্দী মানুষ এবং জরুরি প্রয়োজনে যেসব পেশাজীবী ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া করোনার কারণে আতঙ্কগ্রস্ত এবং হতাশার শিকার হয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন। আর করোনাকালীন এই মানসিক সংকট যে চরমে পৌঁছেছে তা গবেষণাতেও উঠে এসেছে।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) এবং অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির যৌথভাবে পরিচালিত ‘করোনাভাইরাসকালীন মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব’ শীর্ষক ওই সমীক্ষাটি গত ১৪ মে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, করোনাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। করোনা দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান হারে ছড়িয়ে পড়ায় এটি সাধারণ মানুষ তথা প্রাপ্তবয়স্ক, পেশাদার ও সম্মুখসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি এবং দেশে বিদ্যমান অন্য রোগাক্রান্ত মানুষের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, উত্তরদাতাদের ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ অনিদ্রায় ভুগছেন। এ ছাড়া ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ এবং ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ও শঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ সামগ্রিকভাবে আতঙ্কিত। ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তাদের কাছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাসের এই মহামারীতে মানসিক স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘও। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মানসিক রোগীরা যদি সর্বোচ্চ চিকিৎসাও পান তারপরও তাদের লক্ষণ বেড়ে যাবে। এজন্য দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ সময়ে সবাইকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মনোচিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, সামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে যে মহামারীতে মানসিক সমস্যা বাড়ছে। কারণ মানুষ এখন অর্থনৈতিব চাপের মধ্যে আছে। এর সঙ্গে রয়েছে মৃত্যুভয়। আর মানুষ যখন চাপে থাকে তখন আবেগে আক্রান্ত হন। আবেগের মধ্যে এক ধরনের অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা তৈরি হয়। সেজন্য রাগ, ক্ষোভ ও বিরক্তি হতে পারে। এ ছাড়া মানুষের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরির আশংকা রয়েছে। একে বলা হয় ‘সাইকোলজিক্যাল ডিজরাপশন’। আর এই রাগ ক্ষোভ থেকে অনেক সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। দীর্ঘ লকডাউন শেষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও নতুন লকডাউনে আবার ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় ছাঁটাইয়ের আশংকা রয়েছে। এতে চাকরি হারানোর ভয়ে মানসিক চাপে রয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কর্মজীবীরা। ভালো নেই কর্মজীবী নারী ও গৃহিণীরাও। একে ঘরের বাড়তি কাজ অন্যদিকে পারিবারিক কলহের শিকার হয়ে দুর্বিষহ সময় কাটছে নারীদের। বিনোদনের অভাবে ঘরবন্দী শিশুও বিমর্ষ ও বিরক্ত। মানুষ যেকোনো সময় করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এই ভয়েই এখন মানসিক চাপ বেড়েছে অধিকাংশের। কেউ কেউ আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এই খবর সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। তারা বলছেন এই ভাইরাসে মানুষের মনে এক ধরনের আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানসিক সমস্যার কারণে মানুষের মধ্যে অনিদ্রা, শরীর ব্যথা, কাজে মনোযোগ কমে আসা, বিষণœতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকরা এজন্য পর্যাপ্ত ঘুমানো, রাত না জাগা, নিয়ম মেনে বিশ্রাম এবং হালকা ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে আগে থেকেই যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের চিকিৎসাও আপাতত বন্ধ আছে। এতে এসব মানসিক রোগীর সমস্যা আরও বাড়ছে। মিরপুর ১১ নম্বরে মনোরোগ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন সিজোফ্রেনিয়ার রোগী হোসনে আরা হাসনা। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে তার চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ায় বর্তমানে অনিদ্রাসহ অন্যান্য সমস্যায় ভুগছেন।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন