- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

এক নির্ভীক প্রহরীর গল্প : টিপুর অবিরাম প্রহরা

কুমিল্লার অলিগলিতে যখন সকালের আলো ফুটে উঠে, তখন থেকেই দেখা যায় এক পরিচিত মুখ। তিনি হলেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল চৌধুরী টিপু। প্রতিদিন সকাল আটটা নাগাদ তাঁর উপস্থিতি নগরীর চারপাশে এক নিরাপত্তার বলয় সৃষ্টি করে। পুলিশের ইউনিফর্মে সজ্জিত এই মানুষটি কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো ঘুরে ঘুরে নগরীর প্রতিটি কোণা পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর দৃষ্টি সর্বদা সজাগ, নগরীর প্রতিটি চলাচল তাঁর নজরে।

তাঁর কর্মদক্ষতা ও নিষ্ঠা নগরবাসীর কাছে এক আদর্শের প্রতীক। মিশুক চালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেই তাঁর ভালো মনের কথা বলে। তিনি শুধু যানজট নিরসনেই নয়, মাদক, সন্ত্রাস এবং কিশোর গ্যাং নির্মূলেও অবদান রেখেছেন। তাঁর এই কর্মকাণ্ডে তিনি পেয়েছেন ব্যাপক প্রশংসা।

নগরীতে প্রায়ই রাজনৈতিক মানববন্ধন, বিক্ষোভ হয়ে থাকে। এসব ঘটনায় তিনি সদা সজাগ থেকে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করেন। তাঁর এই দায়িত্ববোধ ও কর্মদক্ষতা নগরীর মানুষের কাছে এক আস্থার প্রতীক।

ক্ষমতা থাকলে অনেকেই তার অপব্যবহার করে থাকেন, কিন্তু জিয়াউল চৌধুরী টিপু তাঁর কর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে ক্ষমতা মানেই অপব্যবহার নয়, বরং সেটি হতে পারে জনসেবার এক অনন্য উপায়। তাঁর এই বিশেষ গুণের কথা সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ জানে এবং সম্মান করে।

ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল চৌধুরী টিপু নিজেও বলেন, তিনি কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মহোদয়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনার বক্তব্যের আলোকে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, পুলিশ ও জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক গড়ে তোলার মূল ভিত্তি হলো পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, ত্যাগ, বীরত্ব এবং দেশপ্রেম। এই মানবীয় গুণগুলো ধারণ করেই তিনি চান বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে আরও উন্নত করতে।

পবিত্র রমজানের সন্ধ্যায়, যখন সবাই ইফতারে ব্যস্ত, তখনও টিপু সাহেব রাস্তায় দাঁড়িয়ে পানি খেয়ে রোজা ভাঙেন এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজে নেমে পড়েন। তাঁর এই ত্যাগ ও নিষ্ঠা নগরীর মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা। সাধারণ মানুষ ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ বক্স স্থাপন করেছেন। এই বক্সগুলো নগরীর শৃঙ্খলা বজায় রাখার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

দিনের বেলা ডিউটি করে রাতে বাসায় ফিরে ঘুমাতে পারেন না টিপু সাহেব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও স্বার্থ চিন্তা করে তিনি রাত-দিন তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। অতিরিক্ত ডিউটির চাপে অনেক সহকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁর দৃঢ়তা ও সংকল্প অটুট থাকে।

এই নির্ভীক প্রহরীর গল্প শুধু কুমিল্লার নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি নগরীর জন্য এক উদাহরণ। তাঁর মতো মানুষেরা প্রতিদিন নিজেদের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন, যাতে নগরীর মানুষ নিরাপদে ও শান্তিতে থাকতে পারে। তাঁর এই অবিরাম প্রহরা ও নিষ্ঠা আমাদের সকলের জন্য এক অনুপ্রেরণা ও শ্রদ্ধার পাত্র।