আলোচিত নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কাদের মির্জা ‘ডিজিটাল জালিয়াতি’ করে বিজয়ী হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরাজিত বিএনপির মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী।

জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্প্রচার কেন্দ্র ডয়চে ভেলের কাছে এমন অভিযোগ করেন তিনি।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা ‘সত্যবচনে’ শুরু থেকেই দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেন। তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী বিপুল ভোটে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। এ পৌর এলাকায় মোট ভোট ২১ হাজারের কিছু বেশি। ৬৬ ভাগ ভোট পড়েছে। কাদের মির্জা পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন এক হাজার ৭৭৮ ভোট।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে কোনো চাপ ছিল না আমার ওপর। কেউ আমাদের পোস্টারও ছেঁড়েনি। পরিবেশ ভালো ছিল। ভোটারদের উপস্থিতিও ভালো ছিল। কাউকে ভোট কেন্দ্রে বাধাও দেওয়া হয়নি। কিন্তু এত কম ভোট পেয়ে, আমি কেন সবাই বিস্মিত হয়েছেন। এখানে ইভিএম জালিয়াতি হয়েছে। ইভিএমই ভোটের ফল নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা নতুন ধারার জালিয়াতি মনে হয়েছে আমরা কাছে। আমার হিসাব ছিল ৫০০-৬০০ ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে। সব দলেরই তো একটি ভোট ব্যাংক আছে। সেই ভোট গেল কোথায়?

বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে নবনির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, এখানে কোনো জালিয়াতি হয়নি। আর ইভিএম-এ জালিয়াতির সুযোগই নেই। সর্বোচ্চ শতকরা এক ভাগ ভোট ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া দেওয়া যায়। যদি নির্বাচন কর্মকর্তারা সততার সাথে কাজ না করেন তাহলে অন্যরকম কিছু হতে পারে।

এদিকে সোমবার দুপুরে বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে ভোটারদের সঙ্গে নির্বাচনোত্তর কুশল বিনিময় অনুষ্ঠানে কাদের মির্জা বলেন, আগামীতে কোম্পানীগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। এখন থেকে নির্বাচনগুলো গণতন্ত্রিকভাবে হবে। প্রতিটি নির্বাচন ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হবে।

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে মাস্তানি চলবে না, মারামারি, হানাহানি চলবে না, সাবধান করে দিচ্ছি কোনো অস্ত্রবাজি চলবে না, কোনো প্রকার অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।

কাদের মির্জা আরও বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও জামায়াতের মোশাররফ হোসাইনের সঙ্গে দেখা করেছি। ওনারা আমাকে কোম্পানীগঞ্জের সব বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি এজন্য ওনাদের এ সমাবেশ থেকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি অনুরোধ করব, আমাদের অপরাজনীতি এখান থেকে বন্ধ করতে হবে। সব দল এখন থেকে তাদের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। কিন্তু এর আগে অস্ত্রগুলো, এখন তো জমা দিলে সমস্যা আছে, পানিতে ফেলে দেওয়া হোক। না হলে কিন্তু বেছে বেছে ধরা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। এ অস্ত্রগুলো আমাদের ধ্বংস করছে। রাস্তায় মিছিল করেন, এটা আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমি প্রস্তাব দিয়েছি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বিএনপি-জামায়াত এলাকা ছাড়ে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগ এলাকা ছাড়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা করে, আবার বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা করে, এ সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে, বলেন কাদের মির্জা।