রাতারাতি হাজার হাজার মানুষের জমায়েত। জোগাড় হয়ে গেল আস্ত পে-লোডারও! জনতা, পে-লোডার যুগলবন্দিতে পৌষমেলার মাঠের নির্মীয়মাণ পাঁচিল ধূলিসাৎ।

পাঁচিল দেওয়ার প্রতিবাদে ‘মেলার মাঠ বাঁচাও, শান্তিনিকেতন বাঁচাও’ নামে একটি মঞ্চ তৈরি হয়েছে। মঞ্চের তরফে সোমবার সকালে জমায়েতের ডাক দিয়ে রবিবার বিকেলেই বোলপুর শহরে মাইকিং হয়েছে। প্রচার হয় লাগোয়া গ্রামেও।

ফলে এ দিন যে বড় কিছু একটা ঘটতে চলেছে, তা আন্দাজ করা গিয়েছিল। কিন্তু যে আকারে জমায়েত করে পে-লোডার এনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ দিনের ভিড়ে দেখা গিয়েছে জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতাকে। মিছিলের একেবারে সামনে ছিলেন দুবরাজপুরের বিধায়ক তথা বোলপুরের বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান নরেশ বাউরি। ছিলেন বিশ্বভারতীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ও জেলা তৃণমূল নেতা গগন সরকার, বোলপুরের পুর-প্রশাসকদের এক জন সুকান্ত হাজরা, বিদায়ী কাউন্সিলর ওমর শেখকে।

বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘প্রতিবাদ করতে হলে আইনের পথে আইনকে সঙ্গে নিয়েই হওয়া উচিত। এ ভাবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে নয়। আমাদের ধারণা, কোথাও স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে এই হামলার পিছনে শাসক দলের ইন্ধন আছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোর্টের নির্দেশ মেনেই কাজ করেছেন। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, বর্তমান উপাচার্য রবীন্দ্র-আদর্শকে ধূলিসাৎ করার চক্রান্ত করছেন। তার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ জানিয়েছেন সমাজের সব স্তরের মানুষ। নরেশবাবুর বক্তব্য, ‘‘দলের তরফে নয়, প্রতিবাদে শামিল হয়েছি বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী হিসেবেই। প্রচুর মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কে কী করেছে, বলতে পারব না। উত্তেজিত জনতার উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকে না।’’ একই সঙ্গে উপাচার্যের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এর পরেও উপাচার্য নিজের তুঘলকি সিদ্ধান্ত নেওয়া চালিয়ে গেলে এমন মিলিত প্রতিবাদ হবে যে, উনি বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারবেন না!’’

বিশ্বভারতীতে অবিলম্বে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন কংগ্রেস ও বাম নেতৃত্ব। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে নির্মাণ কাজ হচ্ছে, তৃণমূল বিধায়কের নেতৃত্বে মিছিল যাওয়ার পর সে সব ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, এ সব মেনে নেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি করছি, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা চলতে দেওয়া যায় না।’’

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতীতে নির্লজ্জ ঘটনা! ক্ষমতা দেখাতে লেগে পড়েছে দুই পক্ষ। নির্মাণ, মারপিট, ভাঙচুর হচ্ছে। প্রশাসন চুপ। নিন্দার ভাষা নেই। আমরা চাই আলোচনাতেই সমাধান হোক। বিশ্ববিদ্যালয় খুলুক।’’ সূত্র: আনন্দ বাজার পত্রিকা