- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

আমেরিকা পরাশক্তির তকমা হারাতে পারে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা পৃথিবী অচল হয়ে পড়েছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভাইরাসের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া, যার প্রভাব দেখা যাবে ভবিষ্যতেও। পার্সটুডে।

করোনা মহামারীর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ব কিভাবে বদলে যেতে পারে; তার প্রভাব আমাদের সমাজ কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা নানা মতামত দিচ্ছেন। যার প্রেক্ষিতে নিম্নে আলোচিত কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করা হলো-

অর্থনৈতিক সংকট:

সারা পৃথিবী করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে বলে মনে করি। বড় বড় কোম্পানি ও কর্পোরেট সংস্থাগুলো সরকারি মোটা অংকের সহায়তা ও ঋণ ছাড়ের মাধ্যমে দাঁড়িয়ে যাবে!! তবে সেই সকল কোম্পানিতে কর্মরত লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারাবেন। অন্যদিকে ছোট ও মাঝারি ব্যাবসায়ীরা দীর্ঘ দিনের লকডাউনের মধ্যে পড়ে নিদারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তারা না পাবে সরকারি সহায়তা না পাবে ঋণের ছাড় বা ঋণ। তাই আমাদের উচিত হবে আগামী দুই বছর কোন ধরনের ব্র্যান্ডের কিছু কেনা থেকে বিরত থাকা; ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের থেকে জিনিসপত্র কেনা, যাতে করে তারা একটু হলেও উঠে দাঁড়াতে পারে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা- ওইসিডি হুঁশিয়ার করে বলেছে যে, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর সময় লেগে যাবে। এ মহামারী থেকে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে তার থেকে বেশি বড় হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এর আকস্মিকতা। করোনাভাইরাস গুরুতর আকারে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেকে কমে তা ১ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বেকারত্ব বৃদ্ধি:

করোনার কারণে পুরো বিশ্বে নেমে এসেছে অর্থনৈতিক ধস। প্রতিনিয়তই দেশে দেশে বাতিল হচ্ছে কলকারখানার অর্ডার। সবকিছু কবে স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে কেউ কিছু জানে না। করোনা-পরবর্তী সময়ে বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুনভাবে শুরু করতে পারলেও ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়বে মানুষ। উৎপাদন না হলে, বিক্রি হবে না অর্থাৎ লাভ হবে না। যার অর্থ, কর্মী নিয়োগ হবে না। ব্যবসা প্রতিষঠানগুলো অনাবশ্যক কর্মীদের ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে বলে মনে করি। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষের চাহিদার অতিরিক্ত ব্যয় কমাবে। এর ফলে আমরা এগোতে থাকব অর্থনৈতিক মন্দার দিকে।

রোবটের ব্যবহার বাড়তে পারে:

ইদানিং বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদনকাজে ক্রমেই রোবটের ব্যবহার বাড়ছে। আমরা জানি যে, ধীরে ধীরে যন্ত্রের দখলে চলে যাচ্ছে শ্রমবাজার।

বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবে এই ব্যবস্থা আরও প্রকট আকার দেখা দিয়েছে। কারণ মানবকর্মীর কারণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে কলকারখানা। এদিক থেকে রোবটের কাছে হেরে যাচ্ছে মানুষ। তাই মানবশ্রমিকের প্রয়োজন কমতে শুরু করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে শ্রমবাজারের ৫২ ভাগই চলে যাবে রোবটের দখলে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এ আশঙ্কাকে বাস্তব করবে বলে মনে করি।

অফিস নয়, ঘরে বসেই কাজ:

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার বেড়ে চলায় মানুষ বন্দী হয়ে পড়েছেন ঘরের চার দেয়ালের মাঝে। তাই আর অফিস নয়, ঘরে বসেই কাজ করতে উৎসাহিত করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক খবর, সার্চ ইঞ্জিন গুগল ও মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার সারা বিশ্বে থাকা নিজেদের কর্মীদের ঘরে বসেই অফিসের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে।

করোনার কারণে গতানুগতিকভাবে চলা পন্থাগুলো পরিবর্তন হতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘরে বসে অফিস করলে নাকি বেশি কাজ করতে পারা যায়। হতে পারে বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্তে স্থায়ীভাবে চলে আসতে পারে।

অনলাইন শিক্ষা:

করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দেশের সাথে আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে অনলাইন এডুকেশন চালু করেছে। এটি ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকহারে চালু হতে পারে। শিক্ষা এখন সার্বজনীন, এখন কোনো নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কোর্স করার জন্য সুদূর পথ পাড়ি দিতে হয় না, বরং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই সেই শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব। ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম ইউনিভার্সিটি অব ফিওনিক্স-এর মাধ্যমে অনলাইন এডুকেশনের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এটি প্রায় ৩৪ বিলিয়নের ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে অনলাইন এডুকেশনের হাত ধরেই লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাদের জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমেরিকার সংকট:

করোনার সংক্রমণ ও এর বিশ্বায়নের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়তে যাচ্ছে এককেন্দ্রিক বিশ্বকাঠামোর দেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুরুতে তেমন একটা পাত্তা না দিলেও বর্তমানে আমেরিকায় করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব পরাশক্তির তকমা হারাতে পারে আমেরিকা।

বিশ্ব নেতৃত্বে চীনের উত্থান:

করোনা পরবর্তী বিশ্বে নেতৃত্বে কে দেবে চীন না যুক্তরাষ্ট্র? চীনের উহানে করোনা সংক্রমণ শুরু হলেও সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গোটা পৃথিবীর অর্থ নীতির চাকা যেখানে থমকে সেখানে পুরো চীন সচল। প্রধান প্রধান দেশগুলোতে চীন এখন এই মন্দার বাজারে করোনা শনাক্তের কিট থেকে শুরু করে এর সংক্রমণ রোধে কার্যকর উপায়, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে তাদের বাণিজ্য সচল রেখেছে। এতদিনের চিরচেনা বিশ্ব করোনা পরবর্তী সময়ে যে আগের মতো থাকবে না এটা নিশ্চিত। যার প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব নেতৃত্বে। অনেকেই মনে করছেন ভবিষ্যতের বিশ্ব নেতৃত্বে চীনের উত্থান হতে পারে।

জলবায়ুর পরিবর্তন:

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার ও লকডাউন এর পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইতোমধ্যেই। বিশ্বব্যাপী কলকারখানা বন্ধ, গাড়িঘোড়া নেই তাই বিষাক্ত গ্যাসের প্রাদুর্ভাব নেই। প্রকৃতি যেন দুষণহীন পরিবেশে হাফ ছেড়ে বিরাজ করছে। এর প্রভাবে আমাদের প্রকৃতিগত ভাবে দীর্ঘময়াদি ফল সমগ্র মানবজাতি ও উপভোগ করতে পারবেন। এ যেন আমাদের বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিপরীতে অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক কারসাজি! পৃথিবী যেন তার প্রকৃতিকে আরো একবার রি-স্টার্ট করার সুযোগ পেল।