- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

আমি একা থাকবো বলে তো তোমায় ভালোবাসিনি

দেয়ালের এই সেই দরজা ,যে দরজা থেকে তুমি রোজ বের হতে আমার সাথে দেখার করার নাম করে।বাসায় তো কেউ জানতো না আমাদের কথা তাই তাদের নানা কিছু বুঝিয়ে কত্ত ফন্দি এটে বের হতে ।

এই সেই দরজা যে দরজা থেকে বের হতে গেলেই তোমার মাথায় টক করে আঘাত লেগে যেতো। প্রায় ছয় ফুট এর মত লম্বা ছিলে।এরকম তো হওয়ারই ছিল।আমায় তো বলতে না , আমি কিন্তু তখনই বুঝে যেতাম যখন তুমি তোমার আলু মার্কা মাথাটা নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে‍ আসতে ।

তোমার কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বলতাম, কি হয়েছে কপালে তোমার? তুমি বলতে আরে ও কিছু না ।
আমায় বলতে না কিন্তু আমি বুঝে যেতাম কারণ একবার বলেছিলে এই কথা, আমি শুনে রেগে গিয়ে ঐ দরজায় একসাথে অনেক গুলো আঘাত করেছিলাম ।

তুমি সেদিন বলেছিলে পাগল হলে নাকি ? সেদিন এর পর আর আমায় বলোনি এই বিষয়। অামি কষ্ট পাবো বলে।
কিন্তু আমি বুঝে যেতাম কারন তুমি আমার সামনেও অনেকবার এরকম ব্যথা পেয়েছ। ঐ তো সেইদিনেই আমি দাঁড়িয়েছিলাম তোমার বাড়ির সামনে হুট করে তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো ।তাই চলে আসলাম । কিন্তু তুমি আসতে চাইছিলে না।
তোমার না কি মাথায় খুব বেশি ব্যাথা করছে।

তবু্ও আমি খুব জোরাজোরি করার পর তুমি নিচে নেমে আসলে। আবার টক করে মাথার মধ্যে ! যাইহোক , আজ কেন এসেছি বলতে পারো ?সেদিনের মত আজও তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ।কিন্তু আমি জানি তোমার সাথে আমার আজও দেখা হবার নয়।
কারন এই বাড়িতে তুমি আর থাকো না । তুমি থাকো হয়তো এমন এক গলিতে যেখানের ঠিকানা আমার অজানা । তুমি হয়ত জানো না এই দরজা থেকে এখনও অবদি কয়বার ফিরে এসেছি আমি! প্রায় ৩৬ বারের মত।এই নিয়ে হবে ৩৭ বার ।

তুমি সেদিন আমায় না বলে কথায় যে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে ,আমি এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাই নি তোমাকে। হয়তো কোনও এক কষ্ট নিয়ে চলে গেছো আমাকে ছেড়ে। । হয়ত কোনদিন তোমার খোঁজ পাবো না ।

আচ্ছা তোমার সেদিনের কথা মনে আছে! ঐ দিন শ্রাবনের ১ তারিখ ছিল ।আমার তারিখটা ঠিক মনে আছে।আমার কাছে স্মরনীয় দিন ছিল। সেদিন তোমাকে বলেছিলাম ভালোবাসো? তুমি চুপ করে রইলে ।আমি জানি তোমার চুপ করে থাকার কারণ ।
তখন কিছু শব্দ দিয়ে ছন্দ বানালম; ‘
“ভালোবাসো’?
জবাব দিলে ভালো
না দিলে ক্ষতি নেই!
একগুচ্ছ কদম আনো
এ ছাড়া আমার গতি নেই”

তুমি এটা শোনার সাথে সাথে ঐদিকার কদম গাছ থেকে একগুচ্ছ কদম হাতে চলে এলে।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম!
হটাৎ বৃষ্টি নেমে এল। আজোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। ঐ মুহূর্তে তুমি আমায় বললে, “তুমি বলেছিলে বৃষ্টি কদম ফুল তোমার ভালো লাগে ।এই বর্ষার পানিতে সিক্ত একগুচ্ছ কদম এনেছি ।কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে তোমার সামনে । বর্ষার পানিতে সিক্ত স্নিগ্ধতা পরশ মাখা এ ফুলে মিশছে ভালোবাসার সুবাস ।গ্রহণ করো আমার এ ফুল। আর বুঝে নাও আমি ভালোবাসি কতখানি “।

সেদিন আমি তোমার অক্ষিরও পল্লোবে চোখ রেখে বুঝতে পেরেছিলাম আমার সকল সুখ, ভালোবাসা শুধু তোমার কাছে রয়েছে।
একদিন হঠাৎ আমি জানতে পেরেছিলাম তোমার এই ব্যাধির কথা। তোমার নাকি ব্লাড ক্যানসার! আমি এটা জানতে পারি তাও অন্য একজনের কাছ থেকে।আমি এটা জানার পর আমি নিজেকে আর নিজের জায়গায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।মনে হচ্ছিল পুরো আকাশটা যেনো আমার মাথায় ভেঙ্গে পড়ল। আমি কোনোভাবেই নিজেকে সামলে তুলতে পারলাম না।তখন আমি দৌড়ে গিয়ে তোমার বাসায় যায়।নিজেকে না তোমাকে সামলাবো বলে।

কিন্ত গিয়ে আমি হতবাক হয়ে যাই!তুমি নেই কোথাও নেই।আমি পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করি।সেদিন আমার মনে আছে আমি কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় বসে পড়ি। আমার তখন কোনোরকম মাথা কাজ করছিল না।আমার চারপাশ তখন অন্ধকার লাগছিল।
আমি পাগলের মতো রাস্তায় বসে চিৎকার করছিলাম। আমার কপালে বোধহয় এতো ভালোবাসা লিখা ছিল না । আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তোমার ভেতর যে রোগটা বেড়ে উঠছিলো সেই রোগটা আমার কেনো হলো না?

আমি কেনো বেঁচে থাকব তোমাকে ছেড়ে? এই নগরীতে আমি একা থাকবো বলে তো তোমায় ভালোবাসিনি। আমি তোমার বাসা থেকে একটা চিঠি পাই।তোমার হাতের লেখা চিঠি, সেটা আমার বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি।তুমি যে আমায় আদর করে রাজলক্ষ্মী ডাকতে সেটা তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানতো না।প্রথমেই আমাকে দেওয়া নামটি লিখলে।

তোমার পাওয়া শেষ চিঠি তে তুমি লিখিছিলে ,”
প্রিয় রাজলক্ষ্মী,
‘কখনো কখনো ভালোবাসার মানুষ টিকে বন্ধন থেকে মুক্তি দিতে হয় । নিজের কাছে শত ব্যাথা লুকিয়ে তাকে তার মতো ভালো থাকতে দিতে হয় । সময়য়ের দোলাচলে একসময় খুব আপন ও কাছের মানুষকে ছেঁড়ে না যেতে চাইলেও যেতে হয় ।
আমি তোমাকে কোনোরকম কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না। তুমি আমার শিরা -উপশিরায় বহমান। তোমাকে চাইলেও আমি নিজের থেকে আলাদা করতে পারবো না। আমি কি কারণে চলে গেলাম তুমি হয়তো একদিন জানতে পারবে, সেদিনই তুমি বুঝতে পারবে, আমার এই প্রস্থান শুধু তোমাকে ভালোবেসে।।

আমি চাইবো তুমি আমাকে না খুঁজো। বরং তোমার সামনের যে সোনালী দিনগুলো পড়ে আছে সে দিনগুলো নিয়ে ভাবো।
ভালোবাসা আপেক্ষিক। কিছু ভালোবাসার গল্প অসমাপ্ত ই থেকে যায়।
ইতি,
তোমার ভালোবাসা

লেখা :তাহিরা
শিক্ষার্থী সরকারি বদরুন্নেসা কলেজ,ঢাকা