মাদক, মোবাইল ও ইয়াবা যখন অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে, এলাকার ক্ষমতা যখন বখাটে বর্বরদের কব্জায়, রাজনীতি যখন রাজনীতিবিদের আওতার বাইরে, মানবিকতা যখন উধাও, অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নই যখন সমাজের মূল চালিকা শক্তি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখন নানা কারণে নিজের অস্তিত্ব সংকটে, আর ‘আমরা’ সচেতন সমাজ যখন অসচেতন, তখন এমন সব ঘটনাই ঘটার কথা, যা ঘটছে এখন, প্রতিদিন!

ভিডিও দেখে যারা লজ্জিত হয়েছি, আমাদের আসলে প্রতিদিনই যতবার একেকটি ধর্ষণের কথা শুনি, নারী নির্যাতনের কথা পড়ি পত্রিকায়, ততবারই লজ্জিত হবার কথা কিন্তু আমরা হইনা। আমরা সয়ে যাই, মেনে নেই, মানিয়ে নেই। আমাদের কী আসে যায় অজপাড়াগাঁয়ের কোন এক নারী ধর্ষিতা হলে!

যখন এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কর্মীবাহিনী ধর্ষণ করে তখন আমাদের কিছুটা নড়ে চড়ে বসতে দেখি। আর আজ যখন ভিজ্যুয়ালাইজেশনের কারণে পুরো সমাজ উলঙ্গ হয়ে যায়, তখন আরেকটু বেশি ধাক্কা লাগে। আজ যখন তা ভিজ্যুয়ালি চোখের সামনে এসে পড়লো, তখন হঠাৎ আমাদের সচেতন বিবেক জাগ্রত হয়ে উঠলো। এভাবে নারী নির্যাতন হয়? সত্যি, এভাবেই হয়? এতোটা পাশবিক, নির্মম বর্বরতায়?

প্রতিদিন কত শত নারী বাংলাদেশের কোন না কোন প্রান্তে এভাবেই নিপীড়িত নির্যাতিত হচ্ছে, তা কি আমরা খবর রাখি? কতো নির্যাতক-নিপীড়কও আজ ফেসবুকে এসে বলবেন, কি মর্মান্তিক ঘটনা! কি হল দেশটার! এই হল আমাদের ফেকবুক! তাই আজকাল ফেসবুক ব্যবহারও খুব অপ্রয়োজনীয় মনে হয়|

আমরা যারা প্রতিদিন ধর্ষণের খবর পড়ার জন্যই পড়ি, ধর্ষণকে সয়ে যাওয়া একটি বিষয়ে পরিণত করেছি নিতান্ত অবহেলায়, প্রতিদিনের স্বাভাবিক ঘটনা বানিয়ে ফেলেছি – দিনের পর দিন এইধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরব থেকেছি, এই আমরাও কিন্তু এই দায় এড়াতে পারবো না!

সময় হয়েছে যার যার জায়গা হতে দায় নেবার! সময় হয়েছে পরিবর্তিত এই সমাজ ব্যবস্থায় বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করা! নয়তো ধ্বংস হবে এই যুব সমাজ, বর্বরতায় ছাড়িয়ে যাবে সকল সীমা-পরিসীমা, নিপীড়িত হবে নারীরা, ধর্ষিত হবে পুরো সমাজ!

লেখক: রাশেদা রওনক খান।

শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফেসবুক থেকে।