আমরা কী জাতি হিসেবে উন্নত নাকি লজ্জিত? যেখানে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আজ কি সেই মেরুদণ্ড ভঙ্গুর? এই ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সকল উন্নতি, বড় বড় ডিগ্রি কী আজ ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, যৌন হয়রানির নিচে ধামাচাপা পড়ে গেছে? কোথায় দাঁড়িয়ে আজ সেই সভ্যতা? আজ কেন এই সভ্যতা এতো নির্মম। যেই বাংলাদেশ উন্নয়নের আঙ্গিনায় পা দিচ্ছিল সেই বাংলাদেশ আজ নারীর রক্তে রক্তিত। ১৯৭১ সালে যখন নারীরা বহিরাশক্তি দ্বারা ধর্ষিত হয় আজ এই স্বাধীন বাংলায় নারীরা তার আপন জাতি থেকেও সুরক্ষা পায় না। প্রতিনিয়ত বিলিন হয়ে যাচ্ছে। আজ বহুদিন সূর্য দেখা হয় না ধর্ষণের খবর না শুনে। রীতিমতো প্রশ্ন একটিই – কেনো এতো ধর্ষণ?

নারীর নিরাপত্তা কোথায়?

যুগ যায় তবে কিছু নোংরা মানসিকতা না বদলায়। বরাবরের মতোই আমরা দোষীকে নয় বরং ভুক্তভোগী কেই দোষারোপ করি। ধর্ষণের পর মূলত ধর্ষককে নয় ধর্ষণের শিকার সেই নারীকেই দোষারোপ করা হয়, খারাপ নজরে দেখা হয়, সম্মানহানি করা হয়।

চলে আসা রীতি অনুযায়ী ধর্ষণের জন্য সমাজে চলিত কারণগুলো দেখানো হয় নারীর পোশাক, নারীর বেপর্দাশীলতা, নারীর অধিক রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকাকে।
তবে আদৌ কি এই কারণগুলো যথার্থ?

স্মাপ্রতিক তথ্যানুযায়ী রক্ষা পায় নি একটি দুই বছরের শিশু ও। রক্ষা পায় নি পর্দার আড়ালে থাকা নুসরাত। রক্ষা পায় নি বাড়ির চারকোনায় থাকা সেই মা ও। সেখানে দোষারোপ করা হয় নারীর পোশাককে তবে কেন? আজ দুই বছরের, এগারো বছরের কোনো মেয়ে শিশু রক্ষা পায় নি। রক্ষা পায় নি মাদ্রাসার সেই ছাত্রী নুসরাত। যদি অধিক রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকাই কারণ হয় তবে কেন আমার সেই মাকে তার নিজ বাড়িতে ধর্ষণ করা হয়। “মহিলা মানুষের একা বাহিরে থাকা দোষের”? আজ এই বাংলাদেশে কী কোন নারী তার ভাই, বন্ধু এমন কি বাবা, চাচা থেকে ও নিরাপদ? স্বামীর সাথে বাহিরে থাকা নিরাপদ? সেই তো সেদিন স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এমন আরো অসংখ্য উদাহরণে আমাদের চারপাশ পূর্ণ।

বাঙালি আজ শিক্ষায় শিক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরুদণ্ড গড়তে গিয়ে সেই শিক্ষাপ্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েই যৌনহয়রানি করা হয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একশত ছাত্রী ধর্ষণের উল্লাসে মেতে উঠে।

তবে কি এই হলো শিক্ষিত জাতির নমুনা?

আমাদের মগজ পুড়ে গেছে নারী লালসায়। নারীর দেহকাঠামো আজ উল্লাসমাত্র । জাতি ভুলে গেছে মা এর মর্যাদা।কেনো আজ ও দোষ নারীর। এ দোষের অধিকারী তো হয়ার কথা ছিল আমাদের অধম সমাজের,আমাদের মানসিকতার, দৃষ্টিভঙ্গির।

আজ ও নারী মর্যাদা পেল না, পেল না বিচার। ধর্ষণের জন্য এখনো হয় না দৃষ্টান্তমূলক বিচার। আপনার মা কে, বোন কে প্রশ্ন করুন কতোটা অনিরাপত্তায় তারা ভুগছে। কীভাবে একজন নারী শুধুমাত্র চোখ দিয়েই ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।আর কতদিন থাকবে এমন পৈশাচিক মনকতা, কতদিন পাওয়া যাবে না সুষ্ঠুবিচার।

নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে? আপনি নারীর রক্তে রক্তিত বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী-নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি